প্রিয়দেশ-ভারত সফরে যাওয়া মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানামারের পশ্চিমাংশে অবৈধ অভিবাসনকে বন্ধ করার দাবি জানালেন
এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত জাতিগত শুদ্ধি অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক ট্রাজেডি’ হিসেবে অভিহিত করলেন তিনি।
ভারত সফরে আসা সু চি বলেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কিছু বলতে তিনি অনিচ্ছুক। তবে তিনি একই সঙ্গে তিনি সেখানে চলমান হিংসাত্মক ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপরও জোর দেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত সহিংতায় ইতিমধ্যেই বাস্তুহারা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
গত জুন মাসে স্থানীয় রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম সহিংসতা শুরু হয়।
মাঝখানে বিরতি দিয়ে আবারও নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতায় ঘরবাড়িহারা হয় আরও ত্রিশ হাজার লোক।
প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ , জ্বালিয়ে দেওয়া হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। ঘটনার শিকার হন মূলত রোহিঙ্গারাই। অনেক ক্ষেত্রে রাখাইনদের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন বাহিনীও প্রত্যক্ষভাবে মদত দেয় এ নির্যাতনে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা বিভিন্ন চিত্রে এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য প্রত্যক্ষভাবে রাখাইনদের দায়ী করা হলে ভবিষ্যৎ ক্ষমতার খোয়াব দেখা সুচির কণ্ঠে এখন ভিন্ন সুর।
কথিত শান্তিকামী শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রী ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভুলে যাবেন না সহিংসতায় উভয় পক্ষই জড়িত। তাই আমি কোনো পক্ষ নিতে রাজি নই। তবে একই সঙ্গে আমি ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী।”
এ সময় তিনি ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদেরও দায়ী করেন। তিনি বলেন, “যদি এভাবেই সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ অভিবাসন ঘটতে থাকে? আমাদের এটি থামাতে হবে, না হলে কখনই এর সমাধান সম্ভব হবে না।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বলছে, এই সব লোক বার্মিজ আবার মিয়ানমার বলছে এসব লোক এসেছে বাংলাদেশ থেকে।”
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে বসবাসরত আটলাখ রোহিঙ্গাকে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে দেশটির সরকার। নাগরিকত্ব না দিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে সব ধরণের মৌলিক অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে।
রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত ঘটনার জন্য বাংলাদেশও দায় এড়াতে পারে না ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ মানুষ মনে করে একটি মাত্র দেশ এ ঘটনায় জড়িত। কিন্তু সীমান্তের দু’ধারে দু’টি রাষ্ট্র। একদিকে বাংলাদেশ, অপর দিকে মিয়ানমার। এবং সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উভয় দেশেরই দায়িত্ব।”
জাতিসংঘ কর্তৃক বিশ্বের সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন জাতিগত সম্প্রদায় হিসেবে অভিহিত রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির রাখাইন অধিবাসীদের নির্যাতনের মুখে এখন হুমকির সম্মুখীন।
বেশিরভাগ রোহিঙ্গার দিন কাটছে আশ্রয় শিবিরে। আশ্রয় শিবিরগুলোতেও অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।