আবারো পেছালো রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার অফলোডের সময়সীমা।
বুধবার সকাল ১১টায় অর্থমন্ত্রনালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি সমূহের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে শেয়ার অফলোড এবং তালিকাভুক্তির সময়সীমা আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষণা অনুযায়ী গত বছরের জুনের মধ্যে ২৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার কথা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা ও ইস্যু ব্যবস্থাপনা কোম্পানির দীর্ঘসূত্রতার কারণে গত ৩ বছরেও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ডেসকোর ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ২০১০ সালে ডিসেম্বরে প্রথমবার নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি শেয়ার অফলোড করতে না পারায় ১৪ আগস্ট’১১ তারিখে আবারো নির্দেশনা দেন। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রনালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ২১ জুন ডিএসইকে চিঠি দেয়া হলেও তার জবাব না পেয়ে পুুনরায় এ ব্যাপারে ২১ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আজকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কোম্পানিকে আগামী জুনের মধ্যে শেয়ার অফলোড করতে হবে।
পাওয়ার গ্রিডের ১৬.২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দেন ২০১০ সালে ডিসেম্বরে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ৩২১ নং স্মারকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ কোম্পানির ১৬.২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করা হয়নি।
লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, বাখারাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন, গ্যাস ট্রান্সমিশন, জালালাবাদ গ্যাস টিএন্ডটি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিকে ডিসেম্বর ২০১০ সালের পর দ্রুততার সঙ্গে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ১১ জুন অগ্রগতির প্রতিবেদন চাওয়া হলেও এসব কোম্পানির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় আজকের বৈঠকে আগামী জুনের মধ্যে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে গত বছরের ১৪ আগস্ট দ্বিতীয় বারের মতো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের তাগিদ দেওয়া হয়।
একই বছরের ৩০ আগস্ট প্রগতি ইন্ডাষ্ট্রিজকে ২য় বারের মতো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নির্দেশ দেওয়া হয়। একই দিন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডকেও তালিকাভুক্তির বিষয়ে ২য় বারের মতো নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে ব্রান্ডিং না হওয়া পর্যন্ত এ কোম্পানির তালিকাভুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে।
এছাড়া বিমান বাংলাদেশ, টেলিটক বাংলাদেশ, বিটিসিএল, বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প, টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে (টেশিশ), ডিসেম্বর ২০১০ সালের পর দ্রুততার সঙ্গে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু আজ অব্দি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে আজকের বৈঠকে এসব কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় এবং আগামী জুনের মধ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এদিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভয়ে তালিকাভুক্তির বিষয়ে নানা জটিলতার অজুহাত সৃষ্টি করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরা কালক্ষেপণ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে গত ৩ বছরে মাত্র ২ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে পেরেছে। অথচ সর্বশেষ গত ১৯ জুন অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রদানের পর দেড় বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ২৩ প্রতিষ্ঠান। তবে এদের মধ্যে ২ কোম্পানির প্রসপেক্টাস এসইসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতিতে আবেদন করা এসেনশিয়াল ড্রাগসের তালিকাভুক্তির আবেদন নাকোচ করে দেয়।