ভোটারদের স্বল্প উপস্থিতির আশঙ্কা কাটিয়ে বিপুল সংখ্যক ভোটার এবার ভোট কেন্দ্রে এসেছেন। নারী ভোটারদের সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক বেশি। তরুণ ভোটারদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো। নিউইয়র্ক ডেমোক্রেট রাজ্য হিসেবেই চিিহ্নত। এখানকার সবগুলো ইলেক্টরাল ভোটই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পাবেন। তারপরও এই অঙ্গরাজ্যে ভোটাররা কোনভাবেই উদাসীনতা দেখাতে রাজী নন। কুইন্সের সানিসাইডের একটি ভোট কেন্দ্রে বোর্ড অব ইলেকশনের হয়ে কর্মরত দুজন বাঙালী নারী মারজিয়া সুলতানা এবং সুলতানা পারভিনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনে কাজ করছেন তারা। বললেন, এবারের নির্বাচনে ভোরবেলা থেকেই ভোট কেন্দ্রে বিরতিহীন ভাবে ভীড় দেখা যাচ্ছে, যা ২০০৮ সালের নির্বাচনেও দেখা যায়নি। দুজনেই জানালেন, এবার নারী ভোটাররাও আসছেন সমান হারে।
এই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা বিশিষ্ট বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেইন ও তার স্ত্রী জানালেন তারা বারাক ওবামাকে ভোট দিয়েছেন। কারন, ওবামা প্রেসিডেন্ট বুশের রেখে যাওয়া দুরাবস্থা থেকে দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ভোট কেন্দ্র এবার সরিয়ে নেয়া হয়েছে নর্দান বুলেভার্ডে। সেখানেও ভোর থেকেই দেখা গেছে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। এই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন একজন প্রয়াত সাংবাদিকের স্ত্রী ও নিউইয়র্কেও একটি ব্যাংকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রহিমা আলম। তিনি জানালেন, এবারের ভোটের ফলাফল নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি ডেমোক্রেট, তাই পরিবার, স্বজনদেরকে ওবামাকে ভোট দিতে ভুল না র্কার জন্য বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ কেন্দ্রেও নারী ভোটারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত।
এস্টোরিয়ার বাঙালি এলাকা থার্টিসিক্স এভিনিউ এর ভোট কেন্দ্র এক ব্লক দুরে থার্টিসেভেন এভিনিউতে। বাঙালি ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ ভোট দিতে এসে জানালেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য ওবামাকে ভোট দিয়েছেন। উল্লেখ্য এবারে প্রতিটি এলাকাতেই বাংলাদেশি আমেরিকানদের উপস্থিতি ছিল অন্য সব সময়ের চেয়ে বেশি।
বাঙালি অধ্যুষিত জ্যামাইকার ইসমত আরা জাহান ও স্বামী এস এম নাজিমুজ্জামান ভোট কেন্দ্রে এসেছেন অফিস শেষে বিকেলে। তারা দুজনেই আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বেকারত্ব নিয়ে উৎকন্ঠিত। জ্যামাইকাতেও ভোটারদের ব্যপক উপ¯িথতি লক্ষ্য করা গেছে। জামাইকার ভোটকেন্দ্রে হয় নিউ আমেরিকান উইমেন্স ফোরামের সভাপতি রোকেয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রচুর সংখ্যক ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে স্যান্ডি আক্রান্ত লং আইল্যন্ডের অধিবাসী বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ মোহাম্মদ নাঈম একজন রিপাবলিকান। তিনি বাংলা নিউজকে জানিয়েছেন, তার এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ নেই। গরম তাজা খাবারের সমস্যা। তার উপর প্রচ- ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত । বিশেষ করে শিশুদের জন্য এঅবস্থা ভয়াবহ।
ডাঃ নাঈম এর কাছে একজন রিপাবলিকান হিসাবে এবারের নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, স্যান্ডি দুর্গত এলাকায় ফেমা’র সাহায্য নিয়ে তার প্রার্থী মিট রমনির নেতিবাচক মন্তব্য ভোটারদেও মনে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে বলে তার ধারণা। এছাড়াও রমনির ’ট্যাক্স’ নীতি নিয়েও কিছু বিতর্ক নির্বাচনে তাকে আহত করতে পারে।
স্যান্ডি দুর্গত সবচাইতে নিউজার্সির বেশী ক্ষতিগ্রস্থ অটলান্টিক সিটি। সেখানেও ভোটারদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষণীয়
বলে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব আটলান্টিক সিটির সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহীন জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান , কয়েকটি এলাকার অল্প কয়েকটি বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া অটলান্টিক সিটিতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে । বড় ধরনের কোন সমস্যা নেই ।
উল্লেখ্য অটলান্টিক সিটিতে এখানে প্রায় তিনশো’রও বেশী পরিবার স্যান্ডির তান্ডবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সংগঠনের কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদুল হাসান জানিয়েছেন স্থানীয় স্টেডিয়ামে অন্যদের সাথে একশো বাঙালি পরিবার ত্রাণ সামগ্রী নিতে এসেছিলেন। তিনি তাদের দুর্গতির কথা জানিয়ে আরো বলেন ,একজন বাঙালি মা ছিলেন যিনি তার ছোট দুই সন্তান নিয়ে এসেছিলেন। তার স্বামী ছুটিতে বর্তমানে বাংলা দেশে থাকায় এই মায়ের করুন দশা আরো বেড়ে গেছে।