দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের ‘তাণ্ডবে’র বিরুদ্ধে সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে সিরিজ কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৭, ৮ ও ১০ নভেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ পরিকল্পনা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর এক জরুরি বৈঠকে এসব কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের কাছে গৃহীত কর্মসূচি প্রকাশ করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও জামায়াতের কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পর আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে মঙ্গলবার। যাতে বিএনপি ও জামায়াত সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কোন গ্যাপ খুঁজে না পায় তা নিশ্চিত করতেই এসব কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে একমত হন বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।
কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে হানিফ জানান, ৮ নভেম্বর বিকাল তিনটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত যাবে। একই দিন সারাদেশের জেলাসদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
এরপর ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে সকালে নূর হোসেনের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিকেল তিনটায় বিএনপি-জামায়াতের অরাজক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। এরপর হবে বিক্ষোভ মিছিল। ওই দিন অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে সারাদেশেও।
এর আগে ৭ নভেম্বর বিকেল তিনটায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।
এর বাইরে পর্যায়ক্রমে ছাত্রলীগ সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াত-শিবিরে বিরুদ্ধে সমাবেশ ও মিছিল করবে।
কর্মসূচি ঘোষণার সময়ে হানিফ বলেন, “জামায়াত গত দু’দিন ধরে সারাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিএনপির মদতপুষ্ট হয়ে তারা এ হামলা চালিয়েছে। তাদের নৃশংস হামলায় পুলিশসহ সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে।”
হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে এসব কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াত-শিবিরকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান হানিফ।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “পুলিশ প্রশাসন এরই মধ্যে নাশকতা ঠেকাতে মাঠে নেমে গেছে। তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে দমন করতে পারবে। এসব কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ বরদাশত করবে না। আওয়ামী লীগ এদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।”
জামায়াত-শিবিরের এমন নাশকতার ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি জানতো না?- এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর ছিলো বলেই অরাজক পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারেনি।”
তিনি বলেন, “জামায়াত হলো সাপের মতো। গর্তে থাকে। হঠাৎ করে ছোবল মারে। তাদের মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগকে খুব বেশি কর্মসূচি দিতে হবে না।”
জামায়াত-শিবির হঠাৎ এমন তাণ্ডব কেন শুরু করলো বলে মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিএনপি তাদের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করেছে এমন কথাবার্তা বলায় জামায়াত তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য এটা করতে পারে। যাতে বিএনপি ভাবে জামায়াতকে বাদ দিলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে জামায়াত তাদের হারানা মনোবল ফিরে পেতেও এটা করতে পারে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, উপপ্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হারুন অর রশীদ, এনামুল হক শামীম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা।