প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে। ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রক্সি যুদ্ধে যোগ দিয়ে ইউক্রেনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছে। এর ফলে ইউরোপের দেশগুলো অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বাজেট ঘাটটিতে পড়েছে। একই সঙ্গে সবচেয়ে সস্তা জালানির উৎস হিসেবে রুশ তেল ও গ্যাস না কিনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিয়েছে ইউরোপ। স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল
জার্মানির মিউনিখের আইএফও ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, ন্যাটোর অনেক বড় সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনে সহায়তা দিতে যেয়ে অভ্যন্তরীণ ঋণে ডুবে যাচ্ছে এবং ইউরোজোনে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রেকর্ড বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে।
জার্মানি আশা করছে ২০২৪ সালে তার বাজেট ঘাটতি ১৮.৪৫ বিলিয়ন ডলার হবে। স্পেন ১১.৯৪, ইতালি ১১.৭৩ ও বেলজিয়াম ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার ঘাটতির মুখে পড়েছে। ইতালির ৭.২ শতাংশ ঘাটতির ফলে দেশটির সরকার রাজস্বের ৯ শতাংশের পরিমাণ ঋণ নিতে সুদের খরচ বাড়াবে।
আইএফও’র অর্থনীতিবিদ মার্সেল স্লেপার বলেছেন, ‘উচ্চ ঋণের মাত্রা এবং উচ্চ সুদের খরচ সহ ইউরোপের দেশগুলিতে আরও ঋণ বাড়ানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। ঘাটতি মোকাবেলায় অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো সহজ নয়। জার্মানি কৃষি ডিজেলে ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা করলে কৃষকরা প্রতিবাদে নামে।
ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি, ঊর্ধ্বমুখী ঋণের চাপে ইউরোপের দেশগুলো এখন বাধ্যতামূলক নতুন আর্থিক নিয়মের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যা তাদের ৩ শতাংশ বার্ষিক ঘাটতির মোকাবেলা ও জিডিপির তুলনায় বিশাল ঋণের ধাক্কা সামলাতে আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বাজেট কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৩টি দেশের ঋণের প্রয়োজনীয়তা জিডিপির তুলনায় ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এদের মধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি রয়েছে। একই সময়ে গত বছর ন্যাটোর ৩০টি সদস্য দেশের মধ্যে মাত্র ১১টি দেশ (যার মধ্যে ৮টি ইইউ সদস্য) জিডিপির তুলনায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ২ শতাংশ পূরণ করেছিল।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ করতে যেয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে যেয়ে কাকতালীয়ভাবে ইউক্রেনের সমর্থনে দেওয়া সামরিক সহায়তা দাঁড়িয়েছে ৫৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। ইইউকে যদি কিয়েভকে এ অর্থ দিতে না হত তাহলে পরপর তিন বছর ধরে এসব দেশ আরামদায়কভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে পারত।
কট্টর রাশিয়া বিরোধী অবস্থানের কারণে ইউরোপের নেতারা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যেয়ে দেশের অভ্যন্তরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন, এমনকি সামাজিক ব্যয় হ্রাস করা হয়েছে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতি মন্দায় ডুবে গেছে। গত মাসে, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন সামাজিক কর্মসূচির পরিবর্তে প্রতিরক্ষায় করের অর্থ খরচে অভ্যস্ত হওয়ার কথা বলার পর তার তীব্র সমালোচনা করা হয়।