গতিহীন হয়ে পড়েছে দাতা গোষ্ঠির অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম। এসব প্রকল্পের অধিকাংশের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূলত অর্থ ছাড় না হওয়ার কারণেই প্রকল্পগুলো শেষ হচ্ছে। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থায়নকারী দাতা সংস্থা। তাদের অভিযোগ, এদেশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রকল্পে জনবল নিয়োগ, ক্রয় প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরিতেও ত্র�টি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দাতা গোষ্ঠি বিশ্বব্যাংক এদেশে বর্তমানে ৩২টি উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৫শ� কোটি ডলার সহায়তা করেছে। এর মধ্যে ১৭২ কোটি ডলারের মোট ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নই গতিহীন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি)। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের সাথে ইআরডি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রকল্প হচ্ছে ঢাকা পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের ১৪৯ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যে এ প্রকল্পটি শুরু হয়। কিন্তু প্রায় ৩ বছরে এ প্রকল্পের অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। একই অবস্থা চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পেও। ২ বছরে এ প্রকল্পে অর্থ ছাড় হয়েছে দশমিক ৩ শতাংশ মাত্র। ফলে এসবক প্রকল্পের এখনো প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমই শেষ হয়নি। এতে হতাশ ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। প্রায় ১৭ কোটি ডলার খরচে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পল্লী এলাকায় প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক ইমারজেন্সি-২০০৭ সাইক্লোন সেন্টার পুনর্বাসন প্রকল্পের মনিটরিং জোরদার করতে বলেছে। একইভাবে চরম সমস্যা জড়িত প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক জবাবদিহিতা প্রকল্পকে। একইভাবে প্রকল্প শুরুর ৪ বছর পরও প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শীর্ষক প্রকল্পে খরচ হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ অর্থ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করতে সময় নষ্ট হওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। একইভাবে বিনিয়োগবান্ধব অর্থায়ন প্রকল্পও ৬ বছওে খরচ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ অর্থ। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা জনবল নিয়োগ। একই অবস্থা বিরাজ করছে উচ্চশিক্ষা ও জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি শীর্ষক প্রকল্পেও।
সূত্র আরো জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য দাতা গোষ্ঠি ও সরকার পর্যালোচনা করবে। তবে বর্তমানে প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের ওপর আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর সরকারকে জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।