রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেল থেকে আটক করা বাংলাদেশি মডেল ও ৩ লিবীয় বিদেশি প্রতারক চক্রের সদস্য বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানের নামে প্রতারণা করা বিদেশি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা নিজ দেশের প্রতিনিধি সেজে বাংলাদেশে অবস্থান করে একদিকে যেমন শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছে, অন্যদিকে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। আর বিদেশি এই প্রতারক চক্রকে সহায়তা করে বাংলাদেশি কিছু দালাল।
মঙ্গলবার দিনগত রাতে রাজধানীর গুলশানের লেক শোর হোটেল থেকে ওই তিন লিবীয়কে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। একই সঙ্গে আটক করা হয় বাংলাদেশি এক মডেলকেও।
আটককৃতরা হলেন— লিবিয়ার নাগরিক সামির আহম্মেদ ওমর (৩৬), আমরা মাহমুদ আমরা (২৩) ও মোবারক সেলিম (৪৫) এবং বাংলাদেশি মডেল প্রিয়াংকা (২৫)।
আটককৃতদের কাছ থেকে ৬৮৪টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, এক লাখ ৮১ হাজার ৩০৪ ইউএস ডলার, ৮ লিবিয়ান দিনার, ২ কাতারীয় রিয়াল, ৭টি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, ২টি ব্ল্যাক বেরি নোটপ্যাড, ২ বোতল ভদকা, মাস্টার কার্ড ২টি এবং ৭টি আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দিনগত রাতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আটককৃতদের হাজির করে ডিবি কর্মকর্তারা এই তথ্য প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর) এর উপ-পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে গুলশানের লেক শোর হোটেলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এই মালামাল উদ্ধার করা হয়। আটককৃত তিন লিবিয়ান নাগরিকের কাছ থেকে বাংলাদেশে বসবাসের কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচারকারীর সদস্য।
তিনি বলেন, এরা বাংলাদেশি একটি চক্রের যোগসাজোশে লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে প্রতারণা করে থাকে। এর আগে ৪০০/৫০০ শ্রমিক লিবিয়াতে গিয়ে পরে ফেরত এসেছে। তবে বাংলাদেশি কোন চক্র তাদের সাথে জড়িত তা এখনো সনাক্ত হয়নি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আটককৃত তিন লিবীয় প্রায় ৩/৪ মাস ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। প্রিয়াংকার সাথে এক হোটেলে সামিরের সাতে পরিচয় হয়। এরপর তারা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত রাতে সামিরের রুম থেকেই প্রিয়াংকাকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, এদের মতো আরো কিছু চক্র রয়েছে। যারা বাংলাদেশে অবস্থান করে এই ধরনের কাজ করে আসছে। এদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। একই সাথে পাসপোর্ট না দেখিয়ে বিদেশি নাগরিকদের হোটেলে অবস্থানের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
পাসপোর্ট ভিসা না দেখিয়ে বিদেশি নাগরিকদের হোটেলে অবস্থান না করতে দেয়া এবং তাদের ব্যাপারে নিকটস্থ থানায় খবর দেয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, আটককৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই ব্যাপারে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।