গবেষণা ছাড়া উৎকর্ষ লাভ করা যায় না : প্রধানমন্ত্রী

গবেষণা ছাড়া উৎকর্ষ লাভ করা যায় না : প্রধানমন্ত্রী

গবেষণা ছাড়া কোনো কিছুতেই উৎকর্ষ লাভ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা কৃষির ওপর গবেষণার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলেই মাত্র ৩ বছরে (১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯) বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানকে বঙ্গবন্ধুই বেশি গুরুত্ব দিতেন। ৭৫ এর পর স্বেরশাসকরা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি।

সোমবার (১১ মার্চ) শাপলা হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক/বিজ্ঞানীদের বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণা ছাড়া কোনো কিছুতেই উৎকর্ষ লাভ করা যায় না। বিজ্ঞানকে বঙ্গবন্ধুই বেশি গুরুত্ব দিতেন। শিক্ষা-গবেষণাসহ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে যা যা প্রয়োজন, সবই করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭৫ সালের পর স্বৈরশাসকরা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি।

পাবনাতে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হবে জানিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া খুব শিগগিরই স্যাটেলাইট দুই উৎক্ষেপণ করার কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, একেকটা দলের নীতি ও দেশপ্রেমের বিষয় থাকে। আওয়ামী লীগ সবসময় বিশ্বাস করে- নিজেরা করবো, কারও কাছে হাত পাতবো না। সরকারের মূল লক্ষ্য মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় বেশি গুরুত্ব দেয়া। অনুদান ও ফেলোশিপের টাকা জনগণের। তাই গবেষণা যেন জনকল্যাণে কাজে লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সকল বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার স্থাপন করছি। প্রথমে ঢাকায় করেছি। নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া সরকারে এসেই দুইটা মামলা দিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমি বলেছি, ভালো করে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে। আমরা একনেকে যারা বসতাম সবাইকে একসঙ্গে মামলার আসামি করে। প্রায় এক ডজন মামলা দিয়েছিল। ২০০৭ সালে দিয়েছিল আরও ছয়টা। আমি বলেছি, সবগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, কারিগরি শিক্ষা আমাদের অত্যন্ত দরকার। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো গবেষণা। গবেষণায় কোনো বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো না। ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে ১২ কোটি টাকা গবেষণায় বরাদ্দ দিই। বিশেষ করে কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দিই। কারণ তখন আমাদের ত্রিশ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য ঘাটতি ছিল। তারপর থেকে প্রতি বাজেটে আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া শুরু করি। এভাবেই আমরা কাজ করে যাই।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, একটা রিজার্ভ মানি নেই, কারেন্সি নোট নেই, যুদ্ধকালীন সময়ে কোনো ক্ষেতে ফসল হয়নি, যা কিছু ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সারা দেশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়কার করে দেয়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ছিল গৃহহারা, আর এক কোটি মানুষ ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই ধরনের অবস্থায় শূন্য হাতে দাঁড়িয়ে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকায় স্কুল, কলেজের সবগুলোর অবকাঠামো তৈরি করা, শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনা পয়সায় বই দেওয়া, ছেলে-মেয়ে, শিক্ষকরা যাতে পোশাক পরতে পারেন সে ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট দেশ গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করি বিজ্ঞানীদের ওপর। বিজ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মধ্যদিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে।’ এ সময় নারীদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অনূর্ধ্ব ১৬ দলকে ডেকে প্রাইজমানি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫৪ গবেষকের হাতে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ ও বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক দেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ১০ জনকে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, ১৯ জনকে বিশেষ গবেষণা অনুদান এবং ২৫ জনকে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফেলোশিপ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর