রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায় ঘটে যাওয়া হলমার্ক কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ব্যাংকটির কলকাতা (ভারত) শাখায় গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকটির কলকাতা শাখায় এলসি খোলা, অভ্যন্তরীণ বিল কেনাসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। এতে ব্যাংকটি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তবে কী পরিমাণ টাকার অনিয়ম হয়েছে এবং এতে ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে কত টাকা, তা এখনো নিরূপণ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। অডিট অধিদফতরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এ ঘটনায় ব্যাংকটির প্রায় শত কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে দূতাবাস অডিট অধিদফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বার বার ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর এক চিঠির মাধ্যমে এই আর্থিক অনিয়ম নিষ্পত্তির জন্য ১৪ দিনের মধ্যে জবাব দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক কলকাতা শাখার ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের স্থানীয় হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এ সময়ের মধ্যে কলকাতা শাখায় এলসি খোলা, অভ্যন্তরীণ বিল ক্রয় এবং অন্যান্য ক্রয় কাজে শত কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। অথচ হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ টাকার অনিয়মকে পাশ কাটিয়ে গেছে কলকাতা শাখা এবং সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়। এ বিষয়ে জানার পরও প্রধান কার্যালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে দূতাবাস অডিট অধিদফতরের এক অডিটে এই অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর দুবার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানানো হয়। এই অনিয়ম নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি। সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে আবারও চিঠি দিয়েছে দূতাবাস অডিট অধিদফতর।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই নিষ্পত্তির জবাব দেওয়া হবে। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কলকাতা শাখায় যে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে তার সমাধান খোঁজা হচ্ছে। এটি মূলত আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার অনিয়ম। তাই এ ব্যাপারে অডিটের প্রতিবেদন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্কসহ আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির আগারগাঁও ও গুলশান শাখায়ও গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।