গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতায় আনতে হবে উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ে বসবো। গ্রাহককে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জরিমানা দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পেট্রোবাংলা আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী, গ্যাসের জোগান দিতে পারলে ভর্তুকি ৭০ শতাংশ কমে আসতো।
‘২০২৮ সালের মধ্যে ১০০ কূপ খনন করতে চান ভালো কথা, কোনটি কখন করতে চান, টাইমলাইন থাকতে হবে। সাফল্য দেখে মূল্যায়ন করা হবে। সাফল্য জিরো, আপনিও জিরো’ বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সেমিনারে গ্যাসের চাহিদা-সরবরাহ ও সিসমিক সার্ভে এবং কূপ খনন জোরদার করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। অনেকদিন পর এমন আয়োজন দেখা গেল। এতে পেট্রোবাংলা ও কোম্পানিসমূহের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বুয়েট, ঢাবি শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি কাজ পারবেন না, তাকে বাদ দেওয়া হবে। বক্স থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কেউ কাউকে জায়গা ছাড়তে চায় না। বাপেক্স ১০০ বছর ধরে কাজ করবে। তার জন্য ফেলে রাখতে হবে। বাপেক্সের একটি প্রতিযোগী থাকা উচিত।’
তিনি একটি ঘটনার রেফারেন্স টেনে বলেন, ‘যারা বাইরে আছেন, তাদের সবাইকে সঙ্গে রাখতে হবে। ’৮০ সালে ২ডি করা হয়েছে। ৩৯ বছর পরে ৩ডি, তাহলে এতদিন কেন বসে থাকলেন! জ্বালানিতে যারা ছিলেন, তারা টেকনিক্যাল পার্সন। তারা বলতেন, সম্ভাবনা নেই। আর সমালোচনা নয়। আসুন, একসঙ্গে দেশের জন্য কাজ করি।’
নসরুদ হামিদ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি চাই, গঠনমূলক আলোচনা হোক। আমাদের গ্যাস লাগবে। সমালোচনা রয়েছে, বিতরণ কোম্পানি টাকা নেয়, গ্যাস দেয় না। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। চুক্তি থাকবে, গ্যাস না-দিলে টাকা দিতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ কি শুধু টেকনোলজি! টেকনোলজির সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন, কোয়ালিটি জ্বালানিও স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ।’
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ কমে আসায় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। ২/৩ বছর কমবে আবার বাড়বে। কীভাবে ঘাটতি সামাল দেবো, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। ৪৮ কূপ খনন প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী দুই বছরে ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস পাবো। কিন্তু ২ বছরে চাহিদা কত হবে, ২০০০ হাজার এমএমসিএফডি বাড়বে।’
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম বলেন, ‘দুটি এফএসআরইউ দিয়ে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে অনেক অনেক ঘাটতি হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমদানি আরো বেড়ে গেলে গ্যাসের মূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে! আমাদের কোনদিকে যাওয়া উচিত, মতামত ও পরামর্শ দেবেন। সর্বোত্তমভাবে, যে কাজটি করা প্রয়োজন, আমরা করার চেষ্টা করবো।’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হচ্ছে- গ্যাস। আমাদের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতির কারণে সমালোচনা হচ্ছে। সে কারণে আজকে সবাইকে ডাকা হয়েছে, কী করে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো যায়।
তিনি বলেন, চলমান ৪৮টি কূপ খননের পাশাপাশি আরো ১০০টি কূপ খনন করবো ২০২৮ সালের মধ্যে। সে বিষয়ে আপনাদের মূল্যবান মতামত জরুরি। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করতে প্রস্তুত হয়েছি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ও পেট্রোবাংলার জেনারেল ম্যানেজার (রিজার্ভ এবং ডাটা ম্যানেজমেন্ট) মেহেরুল হাসান।