মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে মঙ্গলবার রাতের দ্বিতীয় দফা বিতর্কে আবারও মুখোমুখি হন ওবামা ও রমনি। বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপে এসেই ওবামা যেনো নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। তবে রমনি তার অবস্থান ধরে রেখেছেন।
প্রথম দফা বিতর্কে ওবামা রমনির কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকে ডেমোক্রাট শিবির চিন্তিত ছিল। কারণ নির্বাচনের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি আছে।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এই বিতর্কে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন।
রিপাবলিকান পদ প্রার্থী রমনি নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্য সেবাকে সহজ করবেন, এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ওবামা তার গৃহীত ‘পলিসি’ নিয়ে রমনিকে চ্যালেঞ্জ জানান।
রমনি সঙ্গে সঙ্গে ওবামার রেকর্ড সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “লক্ষ লক্ষ লোক বেকার এবং বিপর্যস্ত অর্থনীতি উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমান রাষ্ট্রপতির গৃহীত নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।”
প্রথম দফা বিতর্কে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় বিতর্কে নিজেকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসেন ওবামা। অন্যদিকে রমনি তার অবস্থান ধরে রেখেছেন।
সিএনএন এবং ওআরসির একটি জরিপ বিতর্কের ফলাফল তুলে ধরেছে। ফলাফলে ওবামা জয়ী হয়েছেন বলে মনে করেন ৪৬ শতাংশ মানুষ আর বিপরীতে রমনি পেয়েছেন মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট।
নিউ ইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির হলরুমে বিতর্ক চলাকালে দুই প্রার্থীকে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে পাইচারি করতে দেখা যায়। নব্বই মিনিটি ধরে চলা বিতর্কে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী একে অপরের বক্তব্য ধরে ধরে আক্রমণ করেন।
সিএনএন এর প্রধান রাজনৈতিক সংবাদদাতা ক্যান্ডি ক্রাউলি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে বিতর্ক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। উভয় প্রার্থীকে তিনি নির্দিষ্ট সময়ে কথা শেষ করার জন্য বার বার আবেদন জানানোর পরও ওবামা রমনির চেয়ে তিন মিনিট সময় বেশি নেন।
বিতর্কের শুরুতেই ওবামা অনেকটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, কিন্তু তিনি চূড়ান্ত উত্তর দিতে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষায় রাখেন তিনি। একই সঙ্গে তার প্রতিপক্ষ রমনিকে আক্রমণের কোনো ধরণের সুযোগ দেননি।
এর আগে রমনি বলেছিলেন, দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, যারা নিজেদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে অক্ষম। এসময় শ্রোতারা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সতর্কভাবে রেকর্ড করে রাখেন।
ওবামা বলেন, “আমি যে সব বিষয়ে বলেছিলাম সে বিষয়ে চিন্তা করুন।” আপনারা সামাজিক নিরাপত্তার কথা শুনেছিলেন, কে সে ব্যাপারে কাজ করেছে? ক্ষতিগ্রস্তদের জীবন রক্ষার্থে কাজ করেছে? ছাত্র, সৈনিক এবং নাগরিকরা যারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করছে এবং যারা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে তাদের জন্য কে কাজ করছে?”
ওবামা বলেন, “আমি ঐ সকল মানুষদের জন্য সংগ্রাম করতে চেয়েছিলাম “কারণ যদি তারা সফল হয় তাহলে আমি মনে করি দেশ সফল হয়েছে।”
এর আগে রমনি তার পাঁচ দফা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দুই বার উপস্থাপন করার পর ওবামা বলেন, এটি মূলত একটি এক দফা পরিকল্পনা।
রমনি প্রতি উত্তরে বলেন, “ওবামা যদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন তাহলে আপনারা কী জানেন আপনারা কী পেতে যাচ্ছেন? গত চার বছরে যা করে এসেছেন তাই পেতে যাচ্ছেন।”
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি, ঋণ, বিশ মিলিয়নেরও বেশি লোকের বেকারত্ব, প্রাণহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করে ওবামার গৃহীত নীতিতে ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রমনি বলেন, “আমরা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেটি কি আমাদের স্থির করার দরকার নেই? ক্রমবর্ধমানহারে বেকার লোকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কি দরকার নেই? ৪৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার খাদ্য ঘাটতির মধ্যে, এ ব্যাপারে আমাদের কি চিন্তা করার দরকার নেই? ৫০ শতাংশ ছাত্র কলেজ থেকে বের হয়ে কাজ পাচ্ছে না, তাদের ব্যাপারে আমাদের কি সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই? ২৩ মিলিয়ন যুবক ভাল চাকরি পাবার জন্য সংগ্রাম করছে, এ বিষয়ে কি আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই?”
তিনি বলেন, “ওবামা বক্তা হিসেবে খুবই চমৎকার, কিন্তু তার পরিকল্পনাগুলো কাজ করেনা।” তার নীতির ব্যাপারে ওবামার সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে রমনি বলেন, তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থানের ওপর জোর দিবেন। তিনি আরও বলেন, “দেশের উজ্জ্বল এবং সাফল্যপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান খুবই জরুরি।”
অবশ্য রমনি তার ট্যাক্স নীতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
পররাষ্ট্রনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে উভয় প্রার্থীই একে অপরকে আক্রমণ করেন। এক্ষেত্রে গত ১১ সেপ্টেম্বর লিবিয়ায় মার্কিন উপদূতাবাসে হামলার ইস্যুটি প্রধান্য পায়। ওই হামলায় মার্কিন দূতসহ চারজন মার্কিন নাগরিক নিহত হন। রমনি বলেন, “সেখানে কী ঘটেছে তা না বুঝতে পেরেই ওবামা প্রশাসন রাজনীতি করছে।”
উত্তরে ওবামা বলেন, এই ইস্যুতে তার প্রশাসন যা করেছে তা অত্যন্ত পরিস্কার। ওবামা যখন এটিকে একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ বলে অভিহিত করেন তখন রমনি ওবামাকে চ্যালেঞ্জ জানান। ওবামা সাথে সাথেই রমনিকে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন যাচাই করার জন্য বলেন।
নিউ ইয়র্কের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির হলরুমে দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এই বিতর্ক টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। হলরুমের দর্শক-সারিতে উপস্থিত ৮২ জন আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দুই প্রার্থীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার সুযোগ পান।