একদিন আগে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন বিসিবির সদ্য বিদায়ী সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। চিটাগং কিংসের কাছ থেকে তামিম ইকবাল একটি টাকাও না পাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এটা দায়িত্ব। গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লিপু সাহেব (গাজী আশরাফ হোসেন লিপু) এই দায়িত্ব পালন করবেন না তা হতেই পারে না। কিন্তু তিনি দায়িত্বই নিচ্ছে না। আজকে দেখলাম তামিম পারিশ্রমিক পায়নি। যেভাবে দাবি করছে সেভাবে হয়তো পাবে না। কিছু তো পেতে হবে। তিনি (লিপু) এটা করতে পারেন। কিন্তু তিনি এটা করেননি। তিনি এটা করলে পত্রিকাতে আসতো না। যতদিন পত্রিকাতে আসবে ততদিন আমি তাকে দায়ি করবো।’
বিসিবি সভাপতির এই বক্তব্যের পরের দিন বুধবার বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু তামিমের ইস্যুতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে হয়তো একটু কম ছিলো। সম্প্রতি (গতকাল) পত্রিকাতে তামিম ইকবালের ‘পেমেন্টের‘ বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। এক্ষেত্রে মাননীয় সভাপতি তার প্রতিক্রিয়ায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নেতা হিসেবে আমাকে দোষারোপ করেছেন। তিনি এটি করতেই পারেন। এ সম্পর্কে তার সবই জানা। অবশ্যই আমরা শতভাগ সমাধান করতে পারিনি। কিন্তু বিপিএলের অন্যান্য বিষয়গুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি সংগ্রহ, বিপিএল সফল ভাবে আয়োজন করা, বিসিবির ফান্ডে সাড়ে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ এবং দেশ বিদেশে এই টুর্নামেন্টটি আয়োজনে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করা, এইজিনিসগুলো দিয়ে বোতলের যে অংশ ভরা ছিলো আমার মনে হয় সেটি তার নজরে আসেনি। যতটুকু খালি সেটুকু নজরে এসেছে। সেই জায়গাটুকুতে যাতে আমরা উন্নতি করতে পারি সেই ব্যাপারটি হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি শতভাগ চান। সে কথাটি মনে রেখে আমরা উন্নতি করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আমার মনে হয়েছে তিনি একটু ভুল করছিলেন, তামিম ইকবালের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে এরকম একটি খবর কেন আসলো আমার মনে হয় জনসম্মুখে মুখ খোলার আগে তিনি একবার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারতেন।’
মোস্তফা কামাল বিষয়টি যে খুব সিরিয়াসলি বলেছেন তা নয়। তিনি আশা করেছিলেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সামাধান করে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না হওয়াতে সভাপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে লিপু জানান, ‘কেন তামিম ইকবালের একটি টাকাও প্রদান করা হয়নি? বিপিএল এই টুর্নামেন্টে দেশি বিদেশি ১১৭ জন খেলোয়াড় অংশ গ্রহণ করেছে। তারমধ্যে মাত্র একজন খেলোয়াড় একটি টাকাও পায়নি। সেটি তামিম ইকবাল। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এটি কখনোই হওয়া উচিৎ না। ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিলো। সে আমাকে অবহিত করেছিলো ব্যাপারটি দেখার জন্য। আমি তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলাম ২০ লাখ নয় এর থেকেও অনেক বেশি টাকা পাবে তুমি। একটু সময় দাও। কিন্তু আমার মনে হয় এখানে কিছুটা অস্থিরতার কারণে সে বিষয়টি জনসম্মুখে নিয়ে এসেছে। পত্রিকায় প্রচারের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে না। আমরা আন্তরিক ভাবেই নিষ্পত্তি করতে পারতাম। তামিমকে নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি বিপিএলের একদম শুরু থেকে ছিলো। বিপিএলের শুরুতেই তারা তামিম ইকবালকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি। বিপিএল চলাকালে বিভিন্ন সময়ে তার দলে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে আরও কিছু সংশয় সৃষ্টি হয়। তা থেকে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। আমি চেষ্টা করছিলাম সেই জমাট বাঁধা বরফকে ভেঙ্গে সুন্দর ভাবে জিনিসটি নিরসন করতে। তামিম ইকবাল অত্যন্ত কুশলী খেলোয়াড়। তিনি ‘আনপেইড’ থাকবেন এটা হতেই পারে না। সেই সুযোগটি আমি শেষপর্যন্ত পাইনি। হয়তো আমি একটু ধীরে এগোচ্ছিলাম। সে দায়িত্ব মাথায় নিচ্ছি কিন্তু চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলো না।’
বিপিএলে অংশ নেওয়া বিদেশি ক্রিকেটারদের সম্মানী প্রদান করা হলেও দেশের অনেক ক্রিকেটার এখনও তাদের বেশিরভাগ টাকা বুঝে পায়নি। কবে পাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে লিপু বলেছেন, ‘কিছু খেলোয়াড় সম্মানী পায়নি, তারা হচ্ছেন আইকন খেলোয়াড়। আইকন খেলোয়াড়দের একমাত্র তামিম বাদে সবাই কমবেশি টাকা পেয়েছে। যেহেতু আমরা একটা ভুল করেছি আইকন ক্রিকেটারদের জন্য ২ লাখ প্লাস ডলার ঠিক করে দিয়ে। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল খুব একটা দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে পারিনি। অন্যান্য খেলোয়াড়ের এখনও কিছু পারিশ্রমিক বাকি আছে। আশা করি ২০ তারিখের মধ্যে সবাই যাবতীয় পাওনা শোধ করে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।’
তামিমের এই বক্তব্যের ফলে বিপিএল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন লিপু, ‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সে একজন পরিপক্ক খেলোয়াড়। টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাকে দেশের সকল খেলোয়াড়দের কথা ভাবা উচিৎ ছিলো। এররকম একটা বক্তব্য যাওয়ার পরে এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব (ভ্যালু) কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হলো আন্তর্জাতিক ভাবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও যে পরিমাণ অর্থের যোগান দিচ্ছে ক্রিকেট বা খেলোয়াড়দের পেছনে, সেটার ক্ষেত্রেও তারা কিছুটা মর্মাহত হবে। দ্বিতীয়ত চিটাগং কিংস একটা ঘোষণা দিয়েছিলো তারা মাসে ২০ হাজার ডলার দিয়ে ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে ব্রায়ন লারাকে আনছে। যখন এরকম ইতিবাচক জিনিসগুলো ঘটছিলো তখন একজন পরিপক্ক খেলোয়াড়ের ব্যপারটি নিষ্পত্তির জন্য যেটা প্রকৃত মাধ্যম হতে পারতো, সেই মাধ্যমকে পাশ কাটিয়ে তিনি পত্রিকায় গিয়ে এই কাজটি কতটুকু ভালো করেছেন সেটা তিনি বলতে পারবেন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটি না হলেও পারতো। জিনিসটির সমাধান হতোই।’