পুলিশের সঙ্গে খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী সমমনা ১২দলের কর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে রাজধানীর পল্টন, বায়তুল মোকাররম মোড়, দৈনিক বাংলাসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেলসহ ও শট গানের গুলি করেছে।
শুক্রবার দুপুড় দেড়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে থেকে মহানবী (সা:) এর অবমাননা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে ও খেলাফত আন্দোলনের নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর গৃহবন্দি থেকে মুক্তির দাবিতে কর্মীরা বিক্ষোভ করার চেষ্টাকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় রাজধানীর পল্টন, রমনা, মতিঝিল ও শাহবাগ থানা মিলে প্রায় শতাধিক কর্মীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, বিক্ষোভকারীরা সঙ্গে জামায়াত শিবিরের কর্মীরাও যোগ দিয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুময়ার নামাজ শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে খেলাফত আন্দোলনের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুব আন্দোলনের সভাপতি মুফতি ফকরুল ইসলাম নেতাকর্মীদের মিছিল করার নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুহুর্তে পুলিশ তাকে আটক করে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কর্মীরা মসজিদের উত্তর গেটে সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বেশ কয়েক রাউণ্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। খেলাফতের কর্মীরা এ সময় কিছুটা পিছু হটে পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ।
রণক্ষেত্র পল্টন
দেড়টার দিকে খেলাফত আন্দোলনের কর্মীদের মিছিলে বাধা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পরপরই খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা কয়েকভাবে ভাগ হয়ে যায়। তারা দৈনিক বাংলা মোড়, গুলিস্থান মোড়, প্রেসক্লাব মোড়, বিজয় নগর, কাকরাইল মোড়সহ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে পুলিশের উপর ইটপাকল নিক্ষেপ করতে থাকে। জবাবে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে শট গানের গুলিও করা হয়। খেলাফত আন্দোলনের কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি থেকেও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়।
এছাড়া জলকামান থাকলেও সেটি শুধু মহড়া দিতে দেখা যায়। এভাবে পুলিশের সাথে খেলাফত কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত। খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা পুলিশি অ্যাকশনে টিকতে না পারে তারা ওই সকল এলাকার বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষের এই ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। তবে এদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
আটক ও তল্লাশি
সংঘর্ষের সময় পুলিশ বায়তুল মোকারমসহ দৈনিক বাংলা, পল্টন, বিজয়নগর, প্রেসক্লাব. গুলিস্থানসহ আশপাশের এলাকা থেকে শতাধিক কর্মীকে আটক করা হয়। এদের পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। আটকের ব্যাপারে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি।
এদিকে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তল্লাশি অভিযান শুরু করে র্যাব ও পুলিশ। বিজয়নগর, কাকরাইল, গুলিস্থান, দৈনিক বাংলা মোড়ের বিভিন্ন অলিগলিসহ রাস্তায় চলাচলকারী মাইক্রোবাস ও সিএনজিতে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করা হয়। বর্তমান এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত যানবাহনগুলোতে তল্লাশি করছিল র্যাব পুলিশের টহল দর।
পুলিশের বক্তব্য
মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, “মুসল্লি সেজে এই সকল কর্মীরা ইট পাটকেল নিয়ে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করেছিল। নামাজ শেষে কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে তারা অতর্কিতভাবে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় শতাধিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অর্ধশতাধিক শট গান থেকে গুলি করে।”
তিনি বলেন, “এরা আসলে জামায়াত শিবিরের কর্মী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ধরে আসে।”
আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, “চার থানা মিলে প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমাদের ৬ জন সদস্য আহত হয়েছে। তাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, আজকের বিক্ষোভে যারা অংশ নেয় তারা গত ২৩ সেপ্টেম্বর আমাদের পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করেছিল। আজকের ঘটনায় মামলা করা হবে বলে তিনি জানান।