ফুলেল অভ্যর্থনা পেলেন আইসিসি সহসভাপতি মোস্তফা কামাল

ফুলেল অভ্যর্থনা পেলেন আইসিসি সহসভাপতি মোস্তফা কামাল

কেউ একজন আ হ ম মোস্তফা কামালের গলায় জড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় পতাকা। ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়েছেন জনে জনে। আকরাম খানের নেতৃত্বে জাতীয় দলের সাবেক পাঁচজন অধিনায়ক ফুল দিয়ে বরণ করেছেন আইসিসির সহ-সভাপতিকে। তিনি তো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র সভাপতিও। বিসিবি’র পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া পেয়েছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লবিতে আইসিসির হবু সভাপতি যখন সংবাদ সম্মেলন করছিলেন তখনও তার পেছনে পরিচালকদের একটি দল জাতীয় পতাকা ধরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিশ্বের অন্য কোন দেশে জন্ম নিলে মোস্তফা কামাল হয়তো এই সম্মান পেতেন না। দেশের পক্ষে সামান্য অর্জনও বিশাল আনন্দ বয়ে আনে বাংলাদেশের মানুষের জন্য। বিসিবি সভাপতি তার প্রিয় ক্রিকেটাঙ্গন থেকে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। বিমানবন্দরে তাকে যে অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে তাতে বাড়াবাড়ি কিছু ছিলো না। কারণ এই প্রথম বাংলাদেশের একজন আইসিসির সহ-সভাপতি হয়েছেন এবং ২০১৪ সালের জুলাইয়ে সভাপতি হবেন। তিনি এই সম্মান প্রাপ্য।

আইসিসির সহসভাপতি মোস্তফা কামালও হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে, ‘আইসিসির সহসভাপতি এবং সভাপতি হিসেবে যে নির্বাচন তা আমার আপনার সকলের বিজয়। যে কোন বিজয়ই আনন্দের এবং সম্মানের। এই বিজয় দেশের ১৬ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছে। আমাদের ক্রিকেটকে গৌরবান্বিত করেছে। আমি বিশ্বাস করি নতুন মাত্রায় বাংলাদেশের ক্রিকেট আরেকটা স্বীকৃতি লাভ করলো। আমি সর্বপ্রথম তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবো যাদের অবদানে আমাদের ক্রিকেট আজকে এখানে এসেছে, আমাদের দেশের সকল ক্রিকেটার, সকল সংগঠক এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে। যাদের পদভারে সমৃদ্ধ আমাদের ক্রিকেট। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের সরকার এবং সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তার অকুণ্ঠ সমর্থন সব সময় ছিলো আমার প্রতি এবং তিনি ছিলেন আমার সকল অনুপ্রেরণার উৎস।’

ভালো লাগা থেকে ক্রিকেটে এসেছেন মোস্তফা কামাল। খেলা দেখতে দেখতে এক সময় সমর্থক হয়েছেন। সেখানে থেকে সংগঠক হয়েছেন পরিকল্পিত ভাবে। ক্রিকেটের জন্য অর্থ এবং সময় দুটোই বিনিয়োগ করেছেন বছরের পর বছর। তার স্বীকৃতি হিসেবে তিন বছর আগে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন। দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতাও পেয়েছেন। জাতীয় পর্যায় থেকে এখন তিনি আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। এই অর্জনের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন বিসিবি সভাপতি, ‘আমি বিশ্বাস করি আজকের এই দিনটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আনন্দের। তেমনি ভাবে নাঙ্গলকোট এবং কুমিল্লার মানুষ যেখানে আমার জন্ম তাদের জন্যও আজকে একটি বিশেষ দিন। আমি আমার জীবনের প্রায় ২৫টি বছর এই ক্রিকেটের জন্য দিয়েছি। ক্রিকেটের জন্য যারা খরচ করে, ক্রিকেটের জন্য যারা সময় দেয়, অর্থ ব্যয় করে, ক্রিকেট কখনও তা ভুলে যায় না। আজকে আমি যে স্বীকৃতি পেলাম আমি বিশ্বাস করি আমরার ক্রিকেটের প্রতি যে অনুরাগ, ক্রিকেটের প্রতি যে মমত্ববোধ তারই কারণে। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আইসিসির সকল সদস্য দেশ সমূহকে। সবাই সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে সহসভাপতি এবং সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তান আমার জন্য অনেক বেশি করেছে, তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ।’

গত জুলাই আইসিসির সহ-সভাপতি হয়ে যেতেন মোস্তফা কামাল। কিন্তু আইসিসির গঠনতন্ত্রে সংশোধন এবং সংযোজন করায় বিলম্ব হয়। ৯ অক্টোবর আইসিসি তাকে আনুষ্ঠানিক সহ-সভাপতি ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই তার দায়িত্ব শুরু হয়ে গেছে। শিগগিরই একটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে বিসিবি সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন কামাল, ‘সহসভাপতি হিসেবে আইসিসিতে আমার দায়িত্বের মেয়াদ শুরু হয়েছে জুলাই মাস থেকে। বিসিবি থেকে সরে যেতে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। আরেকজন সভাপতি তৈরি করতে হবে। সভাপতির কাছে আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যেতে হবে।’

আইসিসির সদস্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার গঠনতন্ত্রে বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও কি প্রক্রিয়ায় সভাপতি হবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সরকার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়তো আরেকজন সাংসদকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দিতে পারে। বাকি পদগুলোতে আগের মতোই নির্বাচন হলেও হতে পারে। আসছে নভেম্বরে বিসিবির বর্তমান কমিটির চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদন হয়নি। সে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে বিসিবির অনেকটা সময় লেগে যাবে।

অনেক প্রতিশ্রুতি এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আইসিসির সদস্যদের সর্বসম্মতিতে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি এখন শুধু বাংলাদেশের নন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকল দেশের। এর ফাঁকেও দেশের জন্য কিছু করতে পারবেন বলে আশা করেন মোস্তফা কামাল, ‘আমি মনে করি দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারবো। আমাদের সঙ্গে যে সকল দেশ প্রতিবেশী ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে যাতে বেশি খেলা হয়, এফটিপিতে যে সব জায়গাগুলোতে খালি আছে, সেগুলো কাভার করতে চেষ্টা করবো। আমার মনে হয় এই প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করতে অনেক বেশি সুবিধা হবে।’

আইসিসির সভাপতি অলঙ্কারিক পদ। এখানে থেকে বেশি কাজের সুযোগ নেই। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া কিছু করা যায় না। সভাপতি, সিইও এবং সহসভাপতি ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারবেন না। তারপরেও তিনি আইসিসির সভাপতি, বাংলাদেশের অহংকার। সে জন্যই তো তাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক জালাল ইউনুস, শফিকুর রহমান মুন্না, জিএস হাসান তামিম ও গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। প্রধান নির্বাচক আকরাম খান, নির্বাচক মিজহাজুল আবেদীন নান্নু, হাবিবুল বাশার, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট এবং খালেদ মাহমুদ সুজন। ছিলেন সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীসহ বিসিবি কর্মচারিদের একটি অংশ।

সত্যিই কামাল করেছে বাংলাদেশের কামাল ভাই। কাজী নজরুলের ভাষায় বললে, ঐ ক্ষেপেছে পাগ্ লী মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
অসুর-সুরে শোর উঠেছে জোর্ সে সামাল-সামাল তাই!
কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!
হো হো কামাল! তু নে কামাল কিয়া ভাই!

খেলাধূলা