বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দশম কংগ্রেসে দলটির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধন করতে যাওয়া গঠতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ পর পর দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না। সিপিবির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গঠনতন্ত্রের বর্তমান ধারা অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ দুটিতে পরপর একাধিকবার নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সিপিবির বর্তমান সভাপতি মনজুরুল আহসান খান পরপর তিনবার সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম পরপর চারবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে সংশোধনীতে আরো একটি প্রস্তাব যুক্ত করা হচ্ছে। সেটি হচ্ছে, কেউ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুই বার নির্বাচিত হওয়ার পর কংগ্রেস যদি তাকে পুনরায় একই পদে চায় সেক্ষেত্রে তৃতীয় বার তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন।
কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ সংশোধনীতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ পরপর তিনবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না।
এছাড়া গঠতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদ করার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। বর্তমান গঠনতন্ত্রে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো বিধান নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির (প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলী) ও কন্ট্রোল কমিশনের বিধান রয়েছে।
গঠনতন্ত্রের এই সব সংশোধনী কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কংগ্রেসে উপস্থাপন করা হবে। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের ভোটে পাশ হলে এই প্রস্তাবগুলো গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হবে।
আগামী ১১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে দেশের এ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির তিন দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই কংগ্রেসের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে পার্টির নেতারা জানিয়েছেন।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ কংগ্রেস কার্যক্রম চলবে। চার বছর পরপর সিপিবির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের উদ্বোধন করা হবে। এরপর উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে ভ্রাতৃপ্রতীম দেশগুলোর নেতারা, পার্টির শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন। দুপুর দেড় টায় বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। এদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের বাইরে উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এই কংগ্রেসে পার্টির কৌশলগত লাইন অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রণয়ন করা রাজনৈতিক প্রস্তাব ও সাংগঠনিক রিপোর্টের ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। তাছাড়া কংগ্রেসে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী, অডিট কমিটির রিপোর্ট, ক্রেডেনশিয়াল কমিটির রিপোর্ট, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট উত্থাপিত ও অনুমোদিত হবে। কংগ্রেসের শেষ অধিবেশনে আগামী চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কন্ট্রোল কমিশন নির্বাচন করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ ঘোষণা করা হবে।
সিপিবির দশম কংগ্রেসে ৯টি দেশের ১৪ টি ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টির ২২ জন প্রতিনিধি অংশ্ নেবেন।
গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী কংগ্রেসের আগে পার্টির সব শাখা, উপজেলা কমিটি ও জেলা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলনে দশম কংগ্রেসের জন্য ৬১৪ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮০ জন নারী এবং ১৬ জন আদিবাসী। এছাড়া ৬০ জন ভেটারসহ ৭২ জন পর্যবেক্ষক এই কংগ্রেসে যোগদানের জন্য মনোনীত হয়েছে।
কংগ্রেস চলাকালীন ১২ ও ১৩ অক্টোবর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিকেল ৩টায় কংগ্রেসের প্রেসব্রিফিং হবে।
কংগ্রেস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “কংগ্রেসের প্রস্তুতি সম্পন্ন। আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার কথা। আমাদের এই বক্তব্যের প্রকৃত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে কংগ্রেসে। কংগ্রেসে আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানানো হবে। সামজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিপদ মোকাবেলার করণীয় বিষয়েও কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হবে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে। এই প্রেক্ষাপটে বাম-গণতান্ত্রিক নতুন কী করণীয় হবে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসছে কিনা জানতে চাওয়া হলে সেলিম বলেন, “দুই একটি পরিবর্তন আসতে পারে।”
এ ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বাম-গণতান্ত্রিক বলয় গড়ে তোলা আহ্বান জানিয়ে কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সকল বাম শক্তিকে একত্র করলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শক্তির সমান্তরাল হয় না। তাই বাম, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উদারনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।