পদ্মাসেতু দুর্নীতি বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক প্যানেল আসছে ১৪ অক্টোবর

পদ্মাসেতু দুর্নীতি বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক প্যানেল আসছে ১৪ অক্টোবর

পদ্মাসেতু প্রকল্পের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে বিশ্বব্যাংকের তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল আগামী ১৪ অক্টোবর (রোববার) ঢাকায় আসছে। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবেন।

বুধবার বিকেলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও তাদের আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক পরিদর্শনের মধ্যে এই সফর প্রাথমিক পর্যায়ের।

তিন সদস্যের এই প্যানেলে আছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান কৌঁসুলি লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো, হংকংয়ের দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি টং ও যুক্তরাজ্যের সিরিয়াস ফ্রড অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড এল্ডারম্যান। এ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোরেনো ওকাম্পো।

পদ্মাসেতুর দুর্নীতি তদন্তে গত ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল গঠনের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।

বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, মোরেনো ওকাম্পো নেতৃত্বাধীন প্যানেল পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি পর্যবেক্ষণে দুদকের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। তারা একটি প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে দাখিল করার পাশাপাশি সরকারকে তাদের পাওয়া পর্যবেক্ষণ অবহিত করবে। একই সঙ্গে অন্য অর্থায়নকারী দাতাদের বিষয়টি অবহিত করা হবে।

এদিকে, দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। তারা ১৪ অক্টোবর আসছেন। ১৪ বা ১৫ অক্টোবরের যে কোনো দিন আমরা একসঙ্গে বসব।”

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানি সংস্থা জাইকা ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এই প্রকল্পের অংশীদার।

তথ্য মতে, এই প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে কিনা।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত জুন মাসে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করেছিল।

তবে সরকারের বহুমুখী তৎপরতায় বিশ্বব্যাংক গত মাসে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ফেরার ঘোষণা দেয়। জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক ঋণসহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করে তারা। এগুলোর মধ্যে আছে: একটি বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালিত তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা পর্যালোচনা করে দেখা।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল ঘোষণার পর বহুজাতিক সংস্থাটি বলেছিলো, “এই প্যানেলের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় সুযোগ, যা তদন্তের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার বাড়বে।”

চুক্তি বাতিলের পর অবশ্য শর্ত পূরণে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। ছুটিতে পাঠানো হয় প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজার ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশারররফ হোসেন ভূঁইয়াকে।

পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত পর্যবেক্ষণ করতে দিতেও রাজি হয় সরকার, যার ফলে প্রকল্পে সম্পৃক্ত হবার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।

প্রসঙ্গত, পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ পেতে কানাডাভিত্তিক প্রকৌশল কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন গ্রুপ কয়েকজনকে ঘুষ দিয়েছে মর্মে অভিযোগ তোলার পরই বিশ্বব্যাংক তার ঋণ প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে।

অর্থ বাণিজ্য