আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য রামুর বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার কক্সবাজারের রামুতে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘‘যারা ইতোপূর্বে ক্ষমতায় এসে জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছিল, তারাই এ হামলা চালিয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের এ ষড়যন্তকারীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। অতীতেও গোপাল কৃষ্ণ মহুরী, বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছিল।’’
বৌদ্ধ বসতিতে বিএনপিদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঘটনার দিন (২৯ সেপ্টম্বর) রাতে স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যান উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন। কিন্তু স্থানীয় সাংসদ বিক্ষোভস্থলে এসে উস্কানিমূলক কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যান। এবং ওই সাংসদ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরই মন্দির ও বসতঘরে হামলা শুরু হয়।’’
এ ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাকেই জবাবদিহি করতে হবে বলে ওই সাংসদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন প্রধারমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এ ঘটনা নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী নিজের দলের লোকজকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। মানি লন্ডারিং কেলেংকারির হোতারা এখন বড় বড় কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা।’’
এসময় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘রামুতে এসে শুনেছি এখনও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। এরা কারা? প্রশাসন এদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবে।’’
এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব ধর্মে শান্তির কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি মুসলিমরাও আক্রান্ত হতে পারে। তাই, সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্যই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’’
এসময় রামুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো সরকারিভাবে পুনর্নির্মাণ করা হবে।
রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, এমপি, কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ, সাংসদ আব্দুর রহমান বদি, অধ্যাপক এথিন রাখাইন, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, কক্সবাজার জেলা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৌলানা সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ সদংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাবেক সভাপতি পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের প্রমুখ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথের, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম, গণআজাদী লীগের সভাপতি হাজী আবদুস সামাদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরু রহমান সেলিম, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিনিধিরা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমানযোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার পৌঁছান। সকাল ১১টায় রামুতে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ মন্দির ও বসতবাড়ি পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি পশ্চিম মেরংলোয়া কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, হাইটুপী ও শ্রীকুল এলাকার লাল চিং, সাদা চিং, বড় ক্যাং এবং বৌদ্ধ বসতি পরিদর্শন করেন এবং বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
এছাড়া রামুর খিজারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশের আগে ক্ষতিগ্রস্ত ১০৭ পরিবারকে ৪ কোটি টাকার বেশি অনুদান দেন। পরে তাদের উদ্দেশে ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার শহরের সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন। সেখানে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিকেল ৪টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।