গ্রেফতারকৃত হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তুষার আহমেদকে পৃথক ভাবে তিনটি মামলায় আটদিন করে ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এছাড়াও গ্রেফতারের সময় অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় তানভীরকে আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কেশব রায় চৌধুরী।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় আসামিদের আদালতে আনা হয়। এজলাসে নেওয়া হয় বিকাল ৪ টায়।
দুদক আসামিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৮, ৯ ও ১৭ নম্বর মামলা ১০ দিন করে ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তানভীরের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলায়ও আরো ১০ দিনসহ তাকে ৪০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়।
মামলাগুলোয় রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনে আবেদন করেন আসামিদের আইনজীবী ফৌজিয়া ইয়াছমিন মুক্তি।
আসামিপক্ষে শুনানি করেন, ঢাকা বারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, কাজী নজীব উল্লাহ হিরু, মোহাম্মদ আলী হোসেনপ্রমুখ আইনজীবী।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন স্পেশাল পিপি মোশারফ হোসেন কাজল, রফিকুল ইসলাম বেনু, কবির হোসাইন, উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ আইনজীবী।
রিমান্ডের পক্ষে দুদকের আইনজীবীরা বলেন, অস্তিত্বহীন আনোয়ারা স্পিনিং মিলস, হলমার্ক ফ্যাশন প্রভৃতি ভুয়া, নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে সোনালী ব্যাংক হোটেল রুপসী বাংলা শাখায় আসামিরা একাউন্ট খোলেন। ওই ব্যাংক থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আসামিরা জনগণের হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে কারা কারা জড়িত, এ টাকা কোথায় আছে তা জানার জন্যই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করে বলেন, আসামিরা ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণ নিয়েছেন। হিসাব শেষে এ টাকা আসামিরা ব্যাংকে ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা আসামিদের জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এরফান উল্লাহ দুদকের তিনটি মামলায় দুই আসামির ৮ দিন করে ২৪ দিন ও অস্ত্র মামলায় ৫ দিনসহ তানভীর মাহমুদের ২৯ দিন ও তুষার আহমেদের ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, রোববার রাত সোয়া ৯টায় রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লক থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের সময় তানভীরের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের ৬ কর্মকর্তা বাদী হয়ে ২৭ জনের নামে রাজধানীর রমনা থানায় ১১টি মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদীরা হলেন- দুদকের প্রধান অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী, উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁইয়া, সহকারী পরিচালক মো. মশিউর রহমান, নাজমুস সাদাত, উপ-সহকারী পরিচালক মো. মজিবুর রহমান ও মো. জয়নুল আবদীন।
হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তুষার আহমেদ ছাড়া মামলার অপর প্রধান আসামিরা হলেন তানভীরের স্ত্রী ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ডিজিএম একেএম আজিজুর রহমান, একই শাখার এসইও সাইফুল হাসান, ইও আবদুল মতিন, ব্যাংকের ডিএমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, জিএম নওশের আলী খন্দকার, মাহবুবুল হক, আনম মাসরুরুল হুদা সিরাজী, মোস্তাফিজুর রহমান, ননী গোপাল নাথ, মীর মহিদুর রহমান প্রমুখ।
মামলার এজাহারের উল্লেখ রয়েছে, ভুয়া এলসির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে এক হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে হলমার্ক গ্রুপ। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অপকর্ম করে হলমার্ক।
উল্লেখ্য, এই এক হাজার ৫৬৮ কোটি টাকার বাইরেও জালিয়াতি করে হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে সব মিলিয়ে মোট ২ হাজার ৬শ কোটি টাকার বেশি অর্থ জালিয়াতি কে হাতিয়ে নেয়।