আত্মগোপনে হারুন-রফিকুলসহ ডেসটিনির পরিচালকরা

আত্মগোপনে হারুন-রফিকুলসহ ডেসটিনির পরিচালকরা

আদালত জামিন বাতিল করায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন ডেসটিনির প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হারুন অর রশিদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনসহ ডেসটিনির পরিচালকরা।

এরই মধ্যে কয়েক দফা গ্রেফতার অভিযানে নেমেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। এমনকি তাদের কারো অবস্থানও নিশ্চিত করতে পারেনি।

দুদকের অনুসন্ধান টিম জানায়, আসামিদের মোবাইল বন্ধ। গোপনে তারা বিকল্প নম্বর ব্যবহার করছেন, তাই মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমেও তাদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

এদিকে কয়েকদিন ধরে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল গত তিনদিন ধরে বন্ধ। এছাড়া তার অফিসিয়াল নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

লে. জেনারেল হারুন অর রশিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। তিনি কর্নেল আতিক বলে পরিচয় দেন। লে. হারুনকে চাওয়া হলে তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “উনি অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলেন না।”

এছাড়া ডেসটিনির অন্য পরিচালকদের মোবাইলে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

দুদক জানায়, ডেসটিনির ২২ পরিচালককে ধরতে ইতিমধ্যে দুদক সোর্স লাগানো হয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “আসামিরা বেশিদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারবেন না। তাদের ধরা দিতেই হবে।”

দুদকের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

দুদকের তদন্ত টিম ডেসটিনির যে ২২ আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে তারা হলেন- হারুন-অর-রশিদ, রফিকুল অমিন, মোহাম্মদ হোসেন, দিদারুল আলম, গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আলী, রফিকুল আমীনের স্ত্রী ফারাহ দীবা, জমসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, শিরিন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান ও আবুল কালাম আজাদ।

৩১ জুলাই ডেসটিনির শীর্ষ ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদক থেকে পৃথক দুটি মানি লন্ডারিং মামলা দায়েরের পর ৬ আগস্ট ডেসটিনির সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তিন পরিচালকসহ ৫ আসামি ঢাকার সিএমএম আদালতের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে জামিন নেন। এরপর বাকি ১৭ আসামিকেও জামিন দেন  অপর এক ম্যাজিস্ট্রেট।

এই জামিন দেয়ার ঘটনায় দুদক সংক্ষুব্ধ হয়ে আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করে। সেই থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ আসামির জামিন বহাল রাখা না রাখা নিয়ে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটে। ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ড. আখতারুজ্জামান ২২ আসামির জামিন বাতিল করেন। এর একদিন পর বিচারক জহুরুল হক ওই জামিন আদেশ স্থগিত করেন। এরপর তিনি জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন তারিখ ধার্য করেন।

২৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত ২২ আসামির জামিন বাতল করেন। ওইদিন ছিল বৃহস্পতিবার। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত লিখিত আদেশের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে পাননি। রোববার তারা আদেশের কপি হাতে পেয়ে ওইদিন রাত থেকেই ২২ আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন বলে জানা গেছে।

দুদকের অনুসন্ধান টিম বাংলানিউজকে জানায়, গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযাগিতায় কয়েকদফা অভিযান চালিয়েছে দুদক। তবে দুদকের ৮ সদস্যের টিম কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।

এর আগে সোমবার ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২২ কর্মকর্তার ৫৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। দুদকের দুই তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক ওই নির্দেশ দেন।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে গত সোমবার দুদকের আইনজীবী মো. কবীর হোসেন এই আবেদন করেছিলেন।

ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং ও অর্থ আত্মসাৎ মামলা করে দুদক। মামলা সূত্রে জানা যায়, ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের হিসাব থেকে ২৭০ কোটি ৫২ লাখ ৪২ হাজার ৮২৪ টাকা ঋণ হিসেবে ১৪টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

একইভাবে ডেসটিনি-২০০০-এর হারুন অর-রশিদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা; এর মধ্যে তোলা হয়েছে ১৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে রয়েছে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

রফিকুল আমীন ও ফারাহ দীবার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে ৮১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; এর মধ্যে তোলা হয়েছে ৭৩ কোটি ২৭ লাখ এবং ব্যাংকে আছে আট কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইভাবে অন্যান্য কর্মকর্তার নামের হিসাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর করা হয়।

অর্থ বাণিজ্য