নির্ধারিত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদ মওকুফ কার্যক্রম সম্পন্ন না করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) এ স্কিম বাস্তবায়নে আবারো সময় চেয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
ঋণের সুদ মওকুফের শেষ কার্যদিবসে অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর সময় চেয়ে এসইসিতে আবেদন জানানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ পাওয়ার অপেক্ষায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিশেষ স্কিমের আওতায় মার্জিন ঋণের ৫০ শতাংশ সুদ মওকুফ করেনি মার্জিন ঋণ প্রদানকারী ২৮ মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যে ২০টির অধিক প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে বিএমবিএ সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সুদ মওকুফ একটি চলমান প্রক্রিয়া। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া চলছে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সুদ মওকুফ করেছে দাবি করে বিএমবিএ সভাপতি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম হয়েছে তাদের বিষয়ে চলতি মাসের ১৪ তারিখের মধ্যে একটি সমন্বিত প্রতিবেদন এসইসিতে জমা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর সুদ মওকুফ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম সুদে ৯০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন চেয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
মোহাম্মদ এ হাফিজ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন বিএমবিএ আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আর এই প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন রয়েছে। এরই মধ্যে এটি বাস্তবায়নে বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মার্জিন ঋণের পোর্টফোলিওর বিপরীতে ৯০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই অর্থ চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। তবে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
এদিকে এসইসি প্রকাশিত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, মার্জিন ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২৮টি মার্চেন্ট ব্যাংকে রয়েছে ৩৮ হাজার ৯৪৬ জন বিনিয়োগকারী, ডিএসইর ২৩৮টি ব্রোকারেজ হাউজে রয়েছে ৫১ হাজার ৬৮০ জন এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৪৯ হাজার ৪২ জন বিনিয়োগকারী।
এতে দেখা যায়, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে সুদ মওকুফ করলে ৬৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা পুনঃতফসিলিকরণ করতে হবে, ডিএসইর করতে হবে ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং সিএসইর ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
বিএমবিএয়ের পক্ষ থেকে ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সরকারের কাছে সহায়তা চাওয়া হলেও ব্রোকারেজ হাউজ তথা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এখনও এ বিষয়ে নির্বিকার।
এদিকে ডিএসই ও সিএসইর অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ সুদ মওকুফে এসইসির বেঁধে দেওয়া সময় অনুসারে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু তার পরেও এটি বাস্তবায়নে দুই সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে ডিএসই ও সিএসই নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম না হলেও এসইসিতে ডিএসই ও সিএসইর পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোরও আবেদন করা হয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো তথ্য জানাননি।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান মার্জিন ঋণের সুদ মওকুফে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা অনেকটাই সুভঙ্করের ফাঁকিতে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিবির এক বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রণীত ফর্ম দেখিয়ে বলেন, ফর্মে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেটি ক্ষতিগ্রস্ত কোনো বিনিয়োগকারীর পক্ষেই পরিপালন করা সম্ভব না। এতে বলা হয়েছে যদি কোনো বিনিয়োগকারী ক্ষতিপূরণের বাকি সুদের কিস্তি দিতে না পারে তাহলে তার সুদ মওকুফ বাতিল বলে গণ্য হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তির একটি ফর্ম তৈরি করেছে বলেও জানা গেছে। এ ধরনের প্রতারণামূলক শর্ত জুড়ে দেওয়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ নভেম্বর পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়ন ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ‘বিশেষ প্রণোদনা’ ঘোষণা করে সরকার। তাতে স্বল্প পুঁজির বিপরীতে ঋণসুবিধা নিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ স্কিম ঘোষণার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। সেই কমিটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে। তাদের মধ্যে যারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের এক বছরের সুদের ৫০ শতাংশ মওকুফের সুপারিশ করা হয়। বাকি ৫০ শতাংশ সুদ একটি আলাদা হিসাবে স্থানান্তর করে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের পরামর্শ দেওয়া হয়।