শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের সেমিফাইনাল লাইনআপ ঠিক হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে দেখা হলে তাদের প্রথম প্রশ্ন থাকে কে জিতবে? তাদের খুশি করার জন্য জ্ঞানগর্ভ একটা বক্তৃতা দিয়ে হয়। বেশির ভাগ সময় পক্ষপাতদুষ্ট যুক্তি দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে রাখি। শ্রীলঙ্কানদের হাসি হাসি মুখ দেখতে বেশ লাগে। তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখার জন্যই এই কৌশল।
পাকিস্তানের বিপরীতে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে রাখলে কিছু ভুল হবে না। তাদের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স দারুণ। প্রথম রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সাত ওভারের ম্যাচে একটি পরাজয় বাদ দিলে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে দলটি। শীর্ষ আটে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়েছে। পরের দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড শ্রীলঙ্কানদের সামনে প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি। অতএব যা বলা হচ্ছে তা একেবারে ভিত্তিহীন না।
শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং এবং বোলিং দুটোতেই ভালো। লাসিথ মালিঙ্গার মতো পেস বোলার আছে। টি-টোয়েন্টি ফর্মেটে অসাধারণ খেলেন তিনি। সোমবার শীর্ষ আটের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে আউট করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। এক ওভারেই নিয়েছিলেন তিন উইকেট। স্পিনে আছেন অজন্তা এবং জীবন মেন্ডিস। বাঁহতি লেগ স্পিনার জীবন প্রতিপক্ষের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। অজন্তা ঠিক মতো হাত ঘুরাতে পারলে টপাটপ উইকেট তুলে নিতে পারেন। পাকিস্তানের অফ স্পিনার সাঈদ আজমলের সঙ্গে জীবন অজন্তা মেন্ডিসের তুলনা হচ্ছে। এই দু’জনকেই রহস্যময় বোলার বলা হলেও শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে তা মনে করেন না, ‘সাঈদ আজমল এবং অজন্তার কোন বোলিং রহস্য অপ্রকাশিত নেই। দু’জনেই পাঁচ ছয় বছর ধরে খেলছে। তারা দু’জন ভালো মানের স্পিনার।’
ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক মাহেলা এবং তিলকারতেœ দিলশান খুব ফর্মে আছেন। কুমার সাঙ্গাকারাও কিছু রান তোলেন। মিডল অর্ডারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও ফর্মে। লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেও কিছু রান পেতে পারে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে একটি পরিপূর্ণ টি-টোয়েন্টি প্যাকেজ দল শ্রীলঙ্কা।
পাকিস্তান তাদের চেয়ে কোন অংশ পিছিয়ে না থাকলেও এগিয়েও নেই। তারা এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচ হেরেছে, ভারতের কাছে শীর্ষ আটের খেলায়। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলছে দলটি। তাদের শক্তি বোলিংয়ে, বিশেষকরে স্পিনে খুব ভালো। বিশ্বসেরা অফ স্পিনার সাঈদ আজমলের সঙ্গে অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজ, শহীদ আফ্রিদি এবং শোয়েব মালিক ফর্মে আছেন। পেস আক্রমণে রাজা হাসান এবং ওমর গুল দারুণ খেলছেন। ১৪৯ রান করেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জয়ের পেছনে তাদের শক্তিশালী বোলিংয়ের ভূমিকা ছিলো সবচেয়ে বেশি। মোহাম্মদ হাফিজ বলছিলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো দল, তারা ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলছে। আমরা কিছুটা উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তাদের বোলিং ভালো। তবে আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার আছে। এই ফর্মেটে স্পিনাররা খুব কার্যকর। পেস বিভাগও ভালো করছে। ওমর গুলোর মতো অভিজ্ঞ সিমার খেলবেন। আশা করি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারবো।’
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের ওপরের দিকটা খুব মজবুত। হাফিজ, ইমরান নাজির ও নাসির জামশেদ নিয়মিত রান পাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কাকে জিততে হলে প্রথমেই এই তিন জনের উইকেট নিতে হবে।
এই টুর্নামেন্টে শহীদ আফ্রিদি এখনও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। বুম বুম আফ্রিদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে রক্ষা নেই। ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আফ্রিদির কাছে হেরে ছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনেরা। এবার প্রতিশোধের একটা সুবর্ণ সুযোগ শ্রীলঙ্কার সামনে। দেশের মাটিতে পাকিস্তানকে হারাতে পারলে আনন্দটা বেশি হবে।
যদিও পরিসংখ্যানে পাকিস্তানের থেকে অনেক পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে নয় ম্যাচের ছয়টিতে জিতেছে পাকিস্তান, তিনটিতে শ্রীলঙ্কা।
টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে বেশি ধারাবাহিক পাকিস্তান। ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। পরের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। তৃতীয় বিশ্বকাপে খেলেছে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। এবারও সেমিফাইনালে উন্নীত হয়েছে। তাদের এই ধারাবাহিকতার রহস্য সম্পর্কে হাফিজ জানালেন, ‘আমরা এই ফর্মেটে মন খুলে খেলি। তারমানে এই নয় অন্য দুই ফর্মেটে মন খুলে খেলিনা। এখানে বেশি শটস খেলতে পারি। সে জন্য আমরা সফল হতে পেরেছি।’