অনিয়ম স্বীকার করলেন হলমার্ক এমডি তানভীর

অনিয়ম স্বীকার করলেন হলমার্ক এমডি তানভীর

হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ‘অনিয়মতান্ত্রিক’ ভাবে ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। হলমার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনা তদন্তে গঠিত সংসদীয় উপ-কমিটির কাছে এ কথা স্বীকার করেন তিনি।

উপ-কমিটি তার কাছে কোম্পানির কাগজপত্র, ঋণ অনুমোদনের দলিল ও সম্পদের হিসাব চেয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব কাগজ-পত্র কমিটির কাছে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে উপ-কমিটির বৈঠকে হলমার্কের কর্মকর্তাদের জেরা করে উপ-কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য মাঈদুল ইসলাম ও গোলাম দস্তগীর গাজী অংশ নেন।

বৈঠকে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ ও জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তুষার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বুধবার সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ডেকেছে সংসদীয় উপ-কমিটি।

গতকাল সোমবার হলমার্ক গ্রুপের এমডি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তলব করে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির বৈঠক শেষে আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “তানভীর মাহমুদ কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন যে, তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ নিয়েছে। কমিটি তার কাছে কোম্পানির কাগজপত্র, ঋণ অনুমোদনের দলিল ও সম্পদের হিসাব চেয়েছে।”

আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব কাগজ-পত্র কমিটির কাছে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তাজুল ইসলাম আরো বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব কমিটি এ তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেবে।”

এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যাদের প্রয়োজন মনে হবে তাদের আমরা ডাকবো।”

এদিকে বৈঠক থেকে বেরিয়ে হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার প্রস্তুতি না থাকায় সংসদীয় কমিটির সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। গতকালই সংসদীয় কমিটির বৈঠকের বিষয়ে জানতে পেরেছি।”

তিনি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কাগজপত্র জমা দেবেন বলে জানান।

তানভীর মাহমুদ বলেন, “ঠিকমতো কথা বলতে পারিনি। দ্রুত বৈঠক শেষ করে দিয়েছে।”

এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কমিটির সদস্যদের কঠিন জেরার মুখে পড়েন তানভীর মাহমুদ। কমিটির আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম বৈঠকে তানভীর মাহমুদকে বলেন, যেভাবে হোক টাকা আপনাকে ফেরত দিতে হবে। আগামী কালকের মধ্যেই সব কাগজ জমা দিতে হবে।

সূত্র জানায়, এ সময় কমিটির মাঈদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়ার জন্য মতামত দেন।

সূত্র জানায় বৈঠকে তানভীর বলেছেন, তিনি অবৈধভাবে ঋণ নিয়েছেন। তবে বিদেশে কোনো টাকা পাচার করেননি। অনেক ব্যবসায়ী প্রতি সপ্তাহে সিঙ্গাপুর যান। তিনি জীবনে একবার মাত্র সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। এর বাইরে কখানো বিদেশ যাননি।

তিনি আরো বলেছেন, দুটি প্রকল্পে সোনালী ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে তাদের দায় ২২০২ কোটি টাকা। ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপ-কমিটি গঠন করা হয়। তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- এম এ মান্নান, গোলাম দস্তগীর গাজী ও মাঈদুল ইসলাম।

গত ২০ সেপ্টেম্বর কমিটির জেরার মুখে হলমার্ক কেলেঙ্কারির সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেন সোনালি ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) একেএম আজিজুর রহমান।

কমিটি এরই মধ্যে সোনালি ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা ও প্রধান শাখা পরিদর্শন করেছে।

হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০১০ সালে এ ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান প্রতিবেদনও দেয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের বেশকিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদক এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ