দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভারী বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং বন্যায় কমপক্ষে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া ভারতে প্রবল বর্ষণে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বেশির ভাগ জেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোমবার সিলেট এবং চট্টগ্রাম পুলিশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শনিবার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মৌসুমী বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের কারণে শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ঝড়ের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে আরও চারজন মারা গেছেন।
সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের বাসিন্দা লোকমান বলেছেন, শুক্রবার ভোরের দিকে পুরো গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে এবং আমরা সবাই আটকা পড়েছি। ২৩ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, ‘সারা দিন আমাদের বাড়ির ছাদে অপেক্ষা করার পর প্রতিবেশী এক ব্যক্তি নৌকায় করে আমাদের উদ্ধার করেছেন। আমার মা বলেছেন, তিনি সারা জীবনে এমন বন্যা কখনই দেখেননি।’
ক্রমবর্ধমান পানি থেকে উদ্ধার হওয়া আসমা আক্তার নামের আরেক নারী বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে তার পরিবার খেতে পাচ্ছে না। তিনি বলেছেন, পানি এত দ্রুত বেড়েছে যে আমরা বাড়ি থেকে কিছুই আনতে পারিনি। যখন সবকিছু পানির নিচে তখন আপনি কীভাবে রান্না করবেন?’’
শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতে দেশে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর। শুক্রবার নান্দােইলে বজ্রপাতে এই তিন শিশু মারা গেছে বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের পুলিশ পরিদর্শক নুরুল ইসলাম বলেছেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাশে ভূমিধসে এক পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকালের দিকে নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, বন্যার কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এই দুই জেলায় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সরকারের বন্যা পূর্বাভাষ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, দেশের প্রধান প্রধান সব নদীতে পানি বাড়ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা এবং উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও রংপুর জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।