চলতি মাসের মধ্যেই সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনারিও কি সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে কেন দেরি হচ্ছে সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। আশা প্রকাশ করছি যে, এ মাসের মধ্যে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।’
‘একটা প্রাক্টিক্যাল প্রবলেম হলো হল ম্যানেজমেন্ট। হলগুলোর অবস্থা তো খুবই খারাপ। দুই বছর যেহেতু বন্ধ ছিল সুতরাং হলগুলো খুলে রিনোভেন্ট করে ছাত্র-ছাত্রীদের জিনিসপত্র বা বিছানাপত্র কতটুকু ব্যবহার উপযোগী আছে, সেগুলো দেখতে হবে। অ্যাপারেন্টলি মনে হচ্ছে যে, এটাই অন্যতম বড় একটা কারণ ইউনিভার্সিটিগুলো খুলতে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘স্কুল-কলেজ তো আমরা খুলে দিয়েছি, পরীক্ষাও ডিক্লেয়ার করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ইনশিওর করেছেন যে, পরীক্ষা নিতে কোনো অসুবিধা হবে না, যেগুলো অলরেডি ডিক্লেয়ার করা হয়েছে। যদি ম্যাসিভ কোনো ডিটুরেশন না হয়, এই সিনারিও কন্টিনিউ থাকলে বা স্ট্যাবল থাকলে ইনশাল্লাহ যেভাবে পরীক্ষা ডিক্লেয়ার করা হয়েছে, সেটা নিয়ে নেওয়া হবে।’
এসময় তিনি জানান, ভ্যাকসিনের বিষয়ে ১৮ বছর পর্যন্ত বলা হচ্ছে। ১৮ বছরের নিচের বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেওয়া যায় কি না তার টেকনিক্যাল বিষয় দেখে এক্সপ্লোর করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসেই খোলার তারিখ ঘোষণা করে।
এর মধ্যে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলছে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর)। এর পরপরই এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২০ অক্টোবর। তার আগে আবাসিক হলগুলো খোলা হবে এবং ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়া হয়েছে। এরপর আরও অনেক শিক্ষার্থী টিকা দিয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলগুলো খুলবে ১৭ অক্টোবর এবং ২০ অক্টোবর সশরীর ক্লাস শুরু হবে। ২১ অক্টোবর খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। হল খুলবে ১১ অক্টোবর থেকে।
ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে ২৫ অক্টোবর। এরপর থেকে বিভাগগুলো তাদের বিভাগীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সশরীর ক্লাস নিতে পারবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ অক্টোবর স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষ এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দিচ্ছে। এরপর ২৬ অক্টোবর থেকে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলবে ৪ অক্টোবর এবং সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২১ অক্টোবর। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ অক্টোবরের পর সশরীর ক্লাস শুরু হতে পারে। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ অক্টোবর থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের সব শিক্ষার্থী, স্নাতকের কয়েকটি অনুষদের চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেবে এবং ১৮ অক্টোবর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর ক্লাস শুরু হবে ২৫ অক্টোবর এবং ২১ অক্টোবর হল খুলবে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ৭ অক্টোবর খুলবে এবং সশরীর ক্লাস শুরু হবে ১৭ অক্টোবর। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৪ অক্টোবর।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (চতুর্থ বর্ষ) এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ৭ অক্টোবর। আর অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য হল খোলা হবে ২০ অক্টোবর।
অন্যদিকে, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে হল এখনো খুলেনি। একাডেমি কাউন্সিলের সভায় ২৮ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খোলার সুপারিশ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও এ মাসেই খুলবে বলে জানা গেছে। একইভাবে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ মাসে খুলবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স, পিএইচডি ইত্যাদি কোর্স) পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ অক্টোবর হল খোলা হবে। আর সশরীর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ৭ অক্টোবর। অন্যান্য শিক্ষার্থীর জন্য ১০ অক্টোবর হল খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সশরীরে ক্লাস শুরু হবে ১৮ অক্টোবর।
নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটির আগে হলগুলো খুলে দেবে। ছুটির পর সশরীর ক্লাস শুরু হবে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দুর্গাপূজার ছুটির পর খোলার প্রস্তুতি চলছে। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে দিন-তারিখ ঠিক হবে।
এরই মধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল খুলে দিয়ে সশরীর পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। আর রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। রোববার (৩ অক্টোবর) ক্লাসের সময় ঠিক হবে।
জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২০ সেপ্টেম্বর সশরীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কবে খুলবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী ১২ অক্টোবর তাদের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। একইভাবে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও কবে সশরীর ক্লাস শুরু হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি।