বঙ্গোপসাগর ও চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন সাগরে জলদস্যুতার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে বাংলাদেশের জলসীমায় সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে ‘জলদস্যুতা (পাইরেসি)’ নয়, বরং ‘দস্যুতা (রবারি)’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রসীমা বিষয়ক অণুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব খুরশেদ আলম রোববার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে এ নাম বাদ দেওয়ার কথা রোববার সরকারকে জানায়।
জলদস্যুতা না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নাম ওই তালিকায় থাকায় বিশ্বের সমুদ্রবাণিজ্যে বাংলাদেশকে বাঁকা চোখে দেখা হচ্ছিল।
গত প্রায় ২০ বছর ধরে আইএমবির ওই তালিকায় বাংলাদেশকে এভাবে জলদস্যুতাপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল।
আইএমবির ওই তালিকায় বাংলাদেশকে অযৌক্তিকভাবে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে ডিসেম্বরের ২০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আইএমবিকে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে।
এক সংবাদ সম্মেলনে এও বলা হয় যে, বাংলা একাডেমী তাদের অভিধানে ভুলভাবে পাইরেসির বাংলা অনুবাদ জলদস্যু করেছে।
এসব ব্যাপারে আইএমবিকে দেওয়া চঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জলসীমার ২০০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে কখনই জলদস্যুতার ঘটনা ঘটেনি, যা হয় তাকে বড়জোর ছিঁচকে চুরি বা ডাকাতি বলা যেতে পারে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবাদপত্র পাঠানোর দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যেই আইএমবি জলদস্যুতা (পাইরেসি)’র জন্য ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ (হাই রিস্ক) এলাকার তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম অপসারণ করেছে।
বাংলাদেশের প্রতিবাদপত্র পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে আইএমবি বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্যে আমূল পরিবর্তন ও সংযোজন করে।
গত ২০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) বাংলাদেশেকে জলদস্যুতা-প্রবণ এবং আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের জন্য ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ (হাই রিস্ক) এলাকা হিসেবে তাদের ওয়েবসাইটে চিহ্নিত করে আসছে এবং বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহারকারী জাহাজগুলোকে জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা প্রদান করে আসছে।
অতিরিক্ত সচিব খুরশেদ আলম রোববার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে আরও জানান, এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিগত ২০ ডিসেম্বর আইএমবির সদর দপ্তরে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়।
প্রতিবাদপত্রে বাংলাদেশ উল্লেখ করে, যেহেতু বাংলাদেশের জলসীমায় সংঘটিত অপরাধগুলোর প্রকৃতি ও পন্থা বিচারে এগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘ছিঁচকে চুরি’ (পেটি থেফট) বা বড়জোর ‘দস্যুতা’ (রবারি) হিসেবে চিহ্নিত করা যায়; তবে ১২ নটিকাল মাইলের মধ্যে সংঘটিত এসব ঘটনাকে কোনও অবস্থাতেই পাইরেসি বলা যায় না।
এছাড়া তথ্য-প্রমাণসহ বাংলাদেশ তার চিঠিতে আরও জানায়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বিদেশি জাহাজগুলোর অনেকেই জলদস্যু তথা পাইরেসি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আইএমবির কাছে অতিরঞ্জিত বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে বানোয়াট তথ্য প্রেরণ করে।
আইএমবি তাদের ওয়েবসাইটে তথ্য পরিবর্তন ছাড়াও আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েবসাইটে জলদস্যুতা (পাইরেসি) এবং সশস্ত্র ডাকাতিকে (আর্মড রবারি) পৃথক মাত্রার অপরাধ হিসেবে উল্লেখ এবং জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন ১৯৮২ এর অনুচ্ছেদ ১০১ অনুযায়ী জলদস্যুতা এবং আইএমও রেজুল্যুশন নং এ-১০২৫ (২৬) অনুযায়ী সশস্ত্র ডাকাতির সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া বিদেশি জাহাজগুলোকে সতর্কীকরণের জন্য নির্ধারিত সাইটে ‘‘পাইরেসি ওয়ার্নিং” এর পরিবর্তে “পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি ওয়ার্নিং” ব্যবহার করেছে আইএমবি।
বাংলাদেশের জলসীমায় অপরাধ সংঘটনকারীদেরকে জলদস্যু (পাইরেট) এর পরিবর্তে ডাকাত (রবারস) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।