হেলেনাকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

হেলেনাকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরকে মাদক দ্রব্য আইনে গুলশান থানায় করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। রোববার (০১ আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ রিমান্ড আবেদন করেন গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানুর রহমান।

এর আগে শনিবার (৩১ জুলাই) সরকারি অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ব্যতীত জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারসহ প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে পরিচালনা করার অভিযোগে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্লবী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়ামিন কবির।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হলে ওইদিনই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অনুমোদন ছাড়া, সংশ্লিষ্ট বৈধ কাগজপত্র ব্যতীত জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারসহ প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছে। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারসহ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আসামি হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাতদিনের রিমান্ড পাওয়া একান্ত প্রয়োজন।

আজ রোববার এই মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম।

এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী।

এদিকে গুলশান থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন বিতর্কিত এই নেত্রী। গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শনিবার দুপুরে উত্তরা র‌্যাব সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তিন দিনের জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিনেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন হেলেনা। বেশকিছু বিস্ফোরক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন বলেও জানায় র‌্যাব।

তিনি বলেন, ব্ল্যাকমেইল করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার তথ্য আমরা পেয়েছি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে‌।

মামলার কারণ হিসেবে খন্দকার আল মঈন বলেন, হেলেনা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যাকেই প্রয়োজন হয়েছে তাকে ঘায়েল করেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন এবং সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। এটাই আমাদের মামলার কারণ।

মঈন বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন এই মামলাটির র‌্যাব তদন্ত করবে তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আমরা আবেদন করব।

তিনি বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের স্বামী ১৯৯০ সাল থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেখান থেকে তিনি পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। আর হেলেনা টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করেছেন। আর এসব অপকর্মের দায় চাপিয়েছেন তার অফিস স্টাফদের ওপর। এমনকি তার ১৫ থেকে ১৬টি ফ্ল্যাট এবং ৬ থেকে ৮টি গাড়ি রয়েছে বলেও জানিয়েছে হেলেনা।

তবে, জিজ্ঞাসাবাদে ফ্ল্যাট কিংবা গাড়ির সংখ্যার প্রকৃত কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবৈধ মাদক, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ১২টার দিকে গুলশানের বাসায় দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, চাকু, বৈদেশিক মুদ্রা, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।

আইন আদালত শীর্ষ খবর