কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল দুর্বল : ফায়ার সার্ভিস

কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল দুর্বল : ফায়ার সার্ভিস

নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের কারখানা ভবনে একই ধরনের দাহ্যবস্তু প্রতিটি ফ্লোরে থাকায় আগুন ভবনের বিভিন্ন তলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, এ ঘটনার মূল কারণ হলো, বস্তুগুলো ছিল দাহ্যবস্তু। একই ধরনের দাহ্যবস্তু প্রতিটি ফ্লোরেই ছিল। তাই এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে আগুন যেতে সময় লাগেনি। এ ছাড়া বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা না হলে এই সমস্যাগুলো হয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অবশ্যই দুর্বল ছিল। এ জন্য এক তলা থেকে ছয় তলায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এটি অনেক বড় ভবন, ভবনের পার্টিশন ছিল মূলত নেট দিয়ে আটকানো। তাদের যে মালামাল বা কর্মক্ষেত্র- এগুলোতে যে পার্টিশন দেওয়া ছিল, তা বড় বড় তার দিয়ে। আগুন ছড়ানোর একাধিক কারণ থাকতে পারে, তবে আমরা মনে করছি এগুলো অন্যতম কারণ। যে ৪৯ জন সেখানে অবস্থান করছিল, তারা এক্সিটের দিকে হয়ত এসব কারণেই যেতে পারেনি। তদন্ত শেষে আমরা সেগুলো নিশ্চিতভাবে বলতে পারব।

এদিকে, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন মারা যান এবং গতকাল শুক্রবার ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। আজ শনিবারও চলছে উদ্ধার কার্যক্রম। তবে নতুন করে কোনো মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ফ্লোরের ভেতরে প্রবেশপথ গুলো সরু ও বাঁকা। কোনো কোনো প্রবেশপথে নেট দেওয়া থাকায় শ্রমিকেরা বের হতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে চার তলা থেকে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকার সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উদ্ধারকাজ ও অগ্নিনির্বাপণ একসঙ্গে চলছে। সমন্বিতভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভেতরে তেমন আগুন নেই। কিছু জায়গায় হালকা ধোঁয়া হচ্ছে। এই ধোয়া বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আশা করি, সহসাই আমরা এটি পারব। তবে পরে আর কোনো মরদেহ আমরা পাইনি। পাঁচ ও ছয় তলায় কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। সারা রাত কয়েক দফায় আমরা কাজ করেছি, আরও উদ্ধারকাজ চালাব।

সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, আশা করি আজ শনিবার বিকেলের মধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হবে। তবে এসব উদ্ধারকাজের শেষ বলতে কিছু নেই। হয়তো পরে দেখা যাবে অন্য কোথাও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হব, উদ্ধারকাজ চলবে।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার পর পরই গোটা ভবনে লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর