ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে থেমে গেল সুইজারল্যান্ডের স্বপ্নময় পথচলা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ গল্প লেখা দলটি স্পেনের সামনেও লড়াই করল দুর্দান্ত। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ফেরাল সমতা। অনেকটা সময় একজন কম নিয়েও রুখে দিল প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ। তবে টাইব্রেকারে এবার আর পেরে উঠল না তারা। সেমিফাইনাল উঠল লুইস এনরিকের দল।
রাশিয়ার সেন্ত পিতার্সবুর্গে শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে থাকে ১-১ সমতা। টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জিতে উৎসবে মাতে প্রতিযোগিতাটির তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। যেখানে দুটি শট ঠেকিয়ে স্পেনের নায়ক গোলরক্ষক উনাই সিমোন।
মূল ম্যাচের ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের ত্রিশ মিনিটেও খেলা ১-১ ব্যবধানে অমীমাংসিত থাকায় ফল নির্ধারণের জন্য দ্বারস্থ হতে হয় টাইব্রেকারের। আগের ম্যাচেই ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জেতায় বাজির দর ছিল সুইজারল্যান্ডের পক্ষেই। কিন্তু গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছেন দলটির তিন খেলোয়াড়।
টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে দেয়া হয়েছিল স্পেনকে। কিন্তু প্রথম শটটি পোস্টে মেরে বসেন স্পেন অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটস। ফলে সম্ভাবনা বেড়ে যায় সুইজারল্যান্ডের। মারিও গ্যাব্রানোভিচের নেয়া নিজেদের প্রথম শটে গোল করে সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করে সুইসরা।
স্পেনের পক্ষে দ্বিতীয় শটে প্রথম গোলটি করেন দানি ওলমো। এরপর সুইসদের পক্ষে দ্বিতীয় শট নিতে আসেন ফাবিয়ার স্কার। তার শট ঠেকিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন। স্পেনের পক্ষে রদ্রির নেয়া তৃতীয় শটটি ঠেকিয়ে ফের সুইসদের আশা বাড়ান গোলরক্ষক ইয়ান সোমার।
কিন্তু সুইজারল্যান্ডের পক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শটে গোল করতে ব্যর্থ হন ম্যানুয়েল আকাঞ্জি ও রুবেন ভারগাস। যার ফলে সোনালি সুযোগ চলে আসে স্পেনের সামনে। তাদের হয়ে চতুর্থ শটে লক্ষ্যভেদ করেন জেরার্ড মোরেনো আর পঞ্চম শটে মিকেল ওয়ারজাবাল গোল করলে ৩-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে যায় স্পেন।
অথচ আগের দুই ম্যাচে তিনটি করে গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে রীতিমতো উড়ছিল সুইজারল্যান্ড। নিজেদের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইউরো কাপে পরপর দুই ম্যাচে তিন গোল দিয়েছে দলটি এবং প্রথমবারের মতো উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু যে টাইব্রেকারে জিতে পেয়েছিল কোয়ার্টারের টিকিট, সেই টাইব্রেকারেই ঘটল এ স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি।
পুরো ম্যাচে অবশ্য একবারও মনে হয়নি ম্যাচটি জিততে পারে সুইজারল্যান্ড। স্প্যানিশদের একের পর এক আক্রমণে নাভিশ্বাস উঠে যায় সুইজারল্যান্ডের রক্ষণভাগের। ম্যাচের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সময় বলের দখল নিজেদের পায়েই রাখে স্পেন, গোলের উদ্দেশ্যে শট করে প্রায় ৩০টি।
ম্যাচের প্রথমার্ধের অষ্টম মিনিটেই প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় স্পেন। কর্নার থেকে খুব উঁচুতে ক্রস করেন বসেন কোকে। যা লাফিয়েও আয়ত্বে পাননি এমেরিক লাপোর্তে। তবে ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান আলবা। তার বুলেট গতির ভলি ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দেন সুইস ডিফেন্ডার ড্যানিশ জাকারিয়া। লিড পেয়ে যায় স্পেন।
এই এক গোলের পর আর সুইজারল্যান্ডের গোলের তালা ভাঙতে পারেনি স্পেন। অবশ্য মূল ম্যাচের বাকিসময়ে বেশিরভাগ সময় বলের দখল নিজেদের দখলে রাখলেও, তেমন জোরালো আক্রমণ করতে পারেনি লুইস এনরিকের শিষ্যরা। যে কারণে মেলেনি দ্বিতীয় গোলের দেখা।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৮ মিনিটের সময় অবিশ্বাস্য এক ভুল করে বসেন স্পেনের দুই ডিফেন্ডার লাপোর্তে ও পাউ তোরেস। হাওয়ায় ভেসে আসা বল ক্লিয়ার করেছিলেন লাপোর্তে। কিন্তু সেই বল লাগে কাছেই থাকা পাউ তোরেসের গায়ে। ফলে বল পেয়ে যান ফ্রেউলার।
ডি-বক্সের মধ্যে অপেক্ষায় থাকা জারদান শাকিরিকে বল বাড়িয়ে দেন ফ্রেউলার। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে সিমনকে পরাস্ত করেন সুইস অধিনায়ক। শাকিরি গোল করেছেন এমন ম্যাচে গত ৯ বছর ধরে পরাজয়ের স্বাদ পায়নি সুইজারল্যান্ড। তাই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে হলেও আশার খোঁড়াক পেয়ে যায় সুইস সমর্থকরা।
এর খানিক পরই বড় ধাক্কা খায় সুইজারল্যান্ড। মাঝমাঠের কাছাকাছি জেরার্ড মোরেনোর কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে স্লাইডিং ট্যাকল করেন ফ্রেউলার। বল তার পায়ে লাগলেও, জোড়া পায়ে ফাউল করায় সরাসরি লাল কার্ড দেখান ম্যাচ রেফারি। ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারিও বদলাননি এ সিদ্ধান্ত।
দশজনের প্রতিপক্ষ পেয়েও নির্ধারিত ৯০ মিনিটের বাকি সময় তেমন আক্রমণ করতে পারেনি স্পেন। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে। যেখানে ১৫ মিনিটের প্রথম অর্ধের পুরোটা সময় খেলা হয় সুইজারল্যান্ডের বক্সের আশপাশেই। এ সময় অন্তত ১০টি শট করে স্পেন। কিন্তু একটিও গোলে পরিণত হয়নি।
পরে দ্বিতীয় ১৫ মিনিটেও ইয়ান সোমারের কঠিন পরীক্ষা নেন জেরার্ড মোরেনো, ফেররান তোরেস, কোকেরা। অবশ্য গোলের সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন মোরেনো। কিন্তু খুব কাছ থেকেও সোমারের শরীরের বরাবর শট করায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় সুইজারল্যান্ড। পরে আর গোলই হয়নি ম্যাচে।