ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের শরীরে ঘটছে এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘মিউকোরমাইকোসিস’। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামেও পরিচিত বিরল কিন্তু বিপজ্জনক এ সংক্রমণ।
মূলত ভারতের গুজরাট, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ দেখা গেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ব্যাঙ্গালুরুতেও। এ ছাড়া হায়দরাবাদ, পুনেসহ আরও কয়েকটি শহরে এই সংক্রমণের খবর মিলেছে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের অনলাইন সংস্করণের খবর- এখন পর্যন্ত আহমদাবাদের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ রোগে সংক্রমিত ৬৭ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। শেষ ২০ দিনের মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৪৫ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দৈনিক ছয়-সাতটি অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে তাদের।
এ ছাড়া মুম্বাইয়ের একাধিক হাসপাতালে খোঁজ মিলেছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ রোগাক্রান্তের।
আনন্দবাজার বলছে, মহারাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। আক্রান্ত ২০০ জনের চিকিৎসা চলছে বলে দাবি করেছে একটি সংবাদ সংস্থা। দিল্লির একটি প্রথম সারির হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, করোনার সঙ্গে এই সংক্রমণ জুড়ে যাওয়ায় নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসক মনিশ মুনজাল বলেছেন, ‘আমাদের হাসপাতালে গত দুদিনে ছয়জন মিউকোরমাইকোসিস নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের দ্রুত ওজন কমছে, দৃষ্টিশক্তি চলে যাচ্ছে, নাক ও থুতনির হাড়ের ক্ষতি হচ্ছে।’ একই হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ অজয় স্বরূপের মতে, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত যে করোনা রোগীদের স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে, তাদের শরীরে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে এমসের প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ‘করোনার কারণে মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসছে। সে কারণেই নানা রকম ফাঙ্গাল ও ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের শরীরে এই সংক্রমণ ঘটনার আশঙ্কা আরও বেশি। তার ওপর টানা স্টেরয়েড শরীরে প্রবেশ করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সে কারণেই এ ধরনের ফাঙ্গাল সংক্রমণ তৈরি হচ্ছে।’
ব্যাঙ্গালুরুর চক্ষু সার্জন ডা. রঘুরাজ হেগড়ে জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে তিনি ১৯ জন রোগী পেয়েছেন। রোগীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ বলে তিনি জানান।
ভারতে গত বছর করোনার প্রথম সংক্রমণের সময় ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণের অল্প কিছু ঘটনার খবর মিললেও এবার ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এই ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণের তীব্রতা ও ব্যাপকতা দেখে বিস্মিত চিকিৎসকরা।