নেদারল্যান্ডসের সরকার বাংলাদেশসহ ৫টি দেশ থেকে শিশুদের দত্তক নেওয়া পুরোপুরি স্থগিত করে দিয়েছে। বিদেশি শিশুদের দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন লঙ্ঘন করা হচ্ছে- এমন এক রিপোর্ট প্রকাশের পর এ পদক্ষেপ নিয়েছে ডাচ সরকার।
সরকারের গঠিত একটি বিশেষ কমিটি দুই বছর ধরে তদন্তের পর ওই রিপোর্টটি দিয়েছে, যা সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও শ্রীলংকা থেকে যে শিশুদের দত্তক নেওয়া হয়েছিল, তার প্রক্রিয়ায় গুরুতর লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত পাওয়া গেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, এর মধ্যে অপহরণ, শিশু পাচার, দলিলপত্র জালিয়াতি ও চুরি এবং মিথ্যা কারণ দেখিয়ে দত্তক নেওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে আইনি সুরক্ষা সংক্রান্ত ডাচ মন্ত্রী স্যান্ডার ডেকার বলেছেন, ডাচ সরকার বহু বছর ধরে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বা কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় দত্তক গ্রহণের প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছে।
ডাচ সরকার এ জন্য দত্তক নেয়া শিশুদের কাছে দুঃখ প্রকাশও করেছে।
স্যান্ডার ডেকার বলেছেন, বহু বছর ধরে সন্দেহজনক অনিয়ম বা অনাচারের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তদন্ত কমিটি দেখতে পেয়েছে যে দারিদ্র্যের কারণে অনেক নারীকে তাদের শিশুকে দত্তক দিতে বাধ্য করা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে জাল কাগজপত্রও ব্যবহার করা হয়।
এই কমিটি বলছে, এসব অবৈধ দত্তকগ্রহণের কিছু ঘটনায় বিভিন্ন দেশে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা এ সংক্রান্ত দলিলপত্র ‘যতেœর সাথে পরীক্ষা করে দেখেননি’ বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ঘুষ গ্রহণ বা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডাচ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের নাগরিক হয়েছেন এমন একজন ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত নারী বিদিয়া অস্তুতি বোয়ের্মা।
বিদিয়া অস্তুতি বোয়ের্মা বলেন, ‘বর্তমান দত্তকগ্রহণ পদ্ধতি শিশু পাচারকে উৎসাহিত করতে পারে। পদ্ধতিটির ব্যাপক সংশোধন করা দরকার, যেহেতু এটি এখনো আর্থিক প্রণোদনাভিত্তিক রয়ে গেছে এবং তা শিশু পাচারে উদ্বুদ্ধ করে।’
খবর বিবিসি বাংলা