মরিয়াও শান্তি নাই ম্যারাডোনার। মৃত্যুর একমাসও পার হয়নি এখনও। বিশ্ব ফুটবলের এই কিংবদন্তির মৃত্যুর পর থেকেই তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে চলছে আলোচনা। কে হবেন তার রেখে যাওয়া বিপুল এই সম্পত্তির মালিক? আর সেই সম্পত্তি নিয়েই এখন জোরালো লড়াই চলছে দাবিদারদের মাঝে। আর সেই সম্পত্তি নিয়ে এখন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে ম্যারাডোনার কবর খোঁড়ার। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
খবরে বলা হয়, ম্যারাডোনার আনুমানিক সম্পত্তির পরিমাণ ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। এই সম্পত্তির দাবিদার শুধু তার ছেলে মেয়ে বা সাবেক স্ত্রী নয়। তার বান্ধবীরাও। তার এই সম্পত্তির লড়াইয়ে নেমেছেন সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকরাও।
সম্পত্তি এই সমস্যা সৃষ্টির পেছনে একটিই মাত্র কারণ যে, ম্যারাডোনা তার সম্পত্তি কারো নামে উইল করে দিয়ে যাননি। আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী ম্যারাডোনা তার সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ স্ত্রী ও সন্তানদের বাইরেও অন্যদের মাঝে ভাগ করে দিতে পারতো। বাকি দুই তৃতীয়াংশ পেত তার স্ত্রী সন্তানরা। কিন্তু যেহেতু তিনি উইল করে যাননি তাই ওই এক তৃতীয়াংশ সম্পত্তি নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে ম্যারাডোনার পরিবারের বাইরের মানুষরা।
এদিকে, যারা নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করছেন, তাদের কখনোই ম্যারাডোনা স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের মামলা আদালতে উঠলে তখন ডিএনএ টেস্ট করার জন্য ম্যারাডোনার মৃতদেহটি উঠানো হতে পারে। ইতোমধ্যেই দাবি উঠেছে, সেক্ষেত্রে ম্যারাডোনার কবর খোঁড়া হোক।
গত কয়েক বছর ধরে ম্যারাডোনার আইনজীবী হিসেবে থাকা মরিসিও দালেসান্দ্রো বলেন, জানি না কারা কারা সম্পত্তির ভাগ চাইবেন, কিন্তু তালিকাটা লম্বা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যদিও এখন পর্যন্ত দিয়াগোর সম্পত্তির সঠিক হিসেব এখনও জানা যায়নি। স্থানীয় একটি পত্রিকা ফোর্বস বিচারে ফুটবলের এই কিং রেখে গেছেন ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, গয়না।
যেসব দেশে তিনি খেলেছেন ও কোচিং করিয়েছেন অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন যেমন- আর্জেন্টিনা, স্পেন, ইটালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ ও মেক্সিকোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই কিংবদন্তির সম্পত্তি।
এই সম্পত্তির দাবি জানাতে পারেন এমন ব্যক্তিরা হলেন, তার স্বীকৃত পাঁচ সন্তান। এছাড়াও ছয় সন্তান রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময় নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান দাবি করে আসছেন। কিন্তু ম্যারাডোনা দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছেন জিয়ানিনা এবং দলমা ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। জিয়ানিনা ও দলমা এই দুজনই ম্যারাডোনার প্রাক্তন স্ত্রী ক্লদিয়া ভিলাফেনের সন্তান। দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ক্লদিয়ার সঙ্গে ম্যারাডোনার বিচ্ছেদ হয়ে যায় ২০০৩ সালে।
ম্যারাডোনার আইনজীবী দালেসান্দ্রো জানিয়েছেন, যারা দাবি করবেন, তাদের দ্রুত আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। মনে হচ্ছে দিয়েগোকে নিয়ে মোট ৬০টি মামলা আদালতে উঠতে পারে। এর অধিকাংশই অবশ্য মানহানির মামলা, যেগুলো এতদিন ধরে ঝুলে রয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন সময়ে তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করায় ম্যারাডোনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। এবার তারাও এই সম্পত্তির ভাগ চাইবেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী, মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছেন এই কিংবদন্তি। তারাও ম্যারাডোনার সম্পত্তির দাবি করবেন।