বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠার অনন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেকে নিজেই হারিয়ে দেন সাকিব। ওয়ানডে ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডারের খেতাব আগেই পেয়েছেন। এখনও শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা ধরে রেখেছেন। ক্রিকেটের সবচেয়ে গর্বের টেস্ট ক্রিকেটেও শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়ে সাকিব আল হাসান প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে রেকর্ডের বরপুত্র তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যক্তিগত অর্জনের যা কিছু ভালো তার সবই সাকিবের। উইজডেন ক্রিকেটার ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা হওয়া। আইসিসির ওয়ানডে এবং টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার হওয়া। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএলে কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে নিয়মিত ম্যাচ খেলা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে খেলা। এই রেকর্ডগুলো দেখার পর কেউ প্রতিবাদ করার দুঃসাহস দেখাবেন না সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি না। বরং অনেকে একধাপ এগিয়ে বলতে পারেন বাংলাদেশের ক্রিকেট লিজেন্ড সাকিব আল হাসান। যার হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রতিটি কোনে কোনে বাংলাদেশ ঠিকানা করে নিচ্ছে।
দেশের ফুটবলে সেরা এবং জনপ্রিয় তারকা যদি কাজী সালাউদ্দিন হন, তবে ক্রিকেটের মহা-তারকা সাকিবই। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার হওয়ায় সে কি আনন্দ সাকিবের,‘সত্যি বলতে আমার জন্য অনেক বড় একটা অর্জন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আমি একটা জায়গায় যেতে পারছি। আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে। চেষ্টা করবো সম্মানের জায়গাগুলো ধরে রাখতে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরই খবরটি চাওড় হতে থাকে। সেলফোনের যুগে সবার কানে কানে পৌঁছে যায় মুহূর্তের মধ্যে। বুস্টের বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকা সাবেক এই অধিনায়ক জেনে যান তার কৃর্তীর খবর,‘যখন খবরটা পেলাম তখন খুবই ভালো লাগছিলো। ভাবছিলাম কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়। সেটা আমার মাধ্যমে হচ্ছে। এদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। আমার এই অর্জনগুলোর গুরুত্ব এখন হয়তো অতটা বুঝতে পারছি না। তবে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর নিশ্চয়ই আলাদা অনুভূতি হবে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ দল হারলেও সাকিব জিতেছেন। প্রথম টেস্টে ৫৯ (৮ ও ৫১) রান করলেও উইকেট পাননি। সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা টেস্টে আবার উল্টো চিত্র। প্রথম ইনিংসে ১৪৪ রান এবং ছয় উইকেট নিয়েছেন। দুর্ভাগ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রানে আউট হয়েছেন। শেষ টেস্টে ১৫০ রান ও সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন। ওয়াসিম আকরাম, শচীন টেন্ডুলকার এবং আশরাফুলের পর চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে হারা ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেলেন সাকিব।
ইনিংসে শতক এবং পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেওয়ার অনন্য যে যে রেকর্ড গড়েছেন সাকিব, তা দেশের অন্যকেউ করতে পারেনি। বিশ্বে ২১ জন ক্রিকেটারের ইনিংসে শতক এবং পাঁচ বা ততোধিক উইকেট আছে। সংখ্যার দিক দিয়ে সাকিবের রেকর্ড ২৮তম।
দেশের ক্রিকেটে রেকর্ডের বরপুত্র সাকিব মনে করেন তার হাত দিয়ে আসা ব্যক্তিগত অর্জনগুলো ক্রিকেটের জন্যই সম্মানের,‘আপাতত ব্যক্তিগত অর্জন মনে হলেও বৃহত্তর অর্থে দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। রেকর্ডের দিকে তাকালেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি দেখা যাবে। আমি মনে করি জাতীয় দলে যত বেশি পারফরমার থাকবে, তাদেরকে অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে উঠার চেষ্টা করবে।’
৪২০ পয়েন্ট নিয়ে সাকিব ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডারের জায়গা ধরে রেখেছেন। ৪০৪ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট অলরাউন্ডারের শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হলেন। টেস্ট এবং ওয়ানডে বোলার হিসেবে সপ্তম স্থানে আছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি ক্রিকেটার। যদিও ব্যাটসম্যান হিসেবে এই দুই ফর্মেটের ক্রিকেটে শীর্ষ ১০ জনে এখনও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।