বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের বলি হলেন প্রকৌশলী ওয়াসিক উদ্দিন। বিমানের এয়ারবাস কেলেঙ্কারির দায় ওয়াসিক উদ্দিনের ওপর চাপিয়ে রোববার তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন না করে, কোনো নিয়ম না মেনেই একতরফাভাবে জামাল উদ্দিনের আক্রোশে চাকুরিচ্যুত করা হলো তাকে। ওয়াসিক উদ্দিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা)।
প্রকৌশলী ওয়াসিক উদ্দিনের মতো নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়ে রক্ষা পেতে চাইছেন পদস্থ কর্মকর্তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব আয়োজনও সম্পন্ন করে ফেলেছেন বিমানের শীর্ষ কর্তারা। শেষ পর্যন্ত বাংলানিউজের প্রতিবেদনই সত্য হলো।
বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, রোববার দুপুরে ওয়াসিক উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ওয়াসিক উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই।“ তাই এ নিয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিমানের একাধিক সূত্র জানায়, বিমানের প্রকৌশল পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায় এড়াতে পারেন না। অথচ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের ঘনিষ্ট হওয়ায় আসাদুজ্জামানকে এ ঘটনায় কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়নি।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোনো ধরনের নিয়ম কানুন না মেনেই ওয়াসিক উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করতে হবে। তদন্ত কমিটি অভিযোগপত্র দেবে। এরপর অভিযুক্তের বক্তব্য নিতে হবে। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথ নিয়ম মেনে তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করবেন। এরপরই অভিযুক্তের বিভাগীয় শাস্তি হবে।
সূত্র জানায়, সংস্থার প্রকৌশল শাখার এক ভুলে বিমানকে গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস উড়োজাহাজ মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে পাঠানোকে কেন্দ্র করেই এই কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে।
বিমানের নিজস্ব বহরের এয়ারবাসটি রেজি. এস-২ এডিকে) সি-চেকের (বড় ধরনের মেরামত) জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় গত ৯ ডিসেম্বর। এরপর ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও উড়োজাহাজটি এখনো ফেরত আসেনি। আর এজন্য বিমানকে এই বিপুল অংকের অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে।
উড়োজাহাজটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের পাঠানো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। এরই এক পর্যায়ে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বিমানের প্রকৌশল শাখাকে একটি ই-মেইল বার্তা পাঠায়। তারা বিমানকে জানায়, তোমরা যদি সম্মত থাকো তাহলে উড়োজাহাজটি পাঠিয়ে দাও। এই ই-মেইল বার্তাটি না দেখেই বিমানের প্রকৌশল শাখার প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিক উদ্দিন উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেয়।
শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানায়, সি-চেকের বাইরে অনেক কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে তারা বিমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে সময়মতো উত্তর না আসায় তারা ধরে নেয় বিমান এতে সম্মত রয়েছে। এরপর সিঙ্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কাজ শুরু করে। মাঝপথে এসে বিমান জানায়, বাড়তি কাজের অর্থ তারা দিতে পারবে না। এ অবস্থায় জটিলতা তৈরি হয়। সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটি হ্যাঙ্গারের বাইরে ফেলে রাখে। এভাবে বিমানের গচ্চার পরিমাণ বাড়তে থাকে। অন্যদিকে বিমান বাড়তি অর্থ দেবে না বলে চাপ দিতে থাকে। এভাবে ৬ মাস কেটে গেছে। আর এতে বিমানের ক্ষতি হয়েছে ৯০ কোটি টাকা।
বিমানের প্রকৌশল শাখার একাধিক প্রকৌশলী বলেন, উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান প্রকৌশল শাখার পরিচালক হিসেবে এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। এই শাখার প্রধান হিসেবে এর দায় তার ওপরও বর্তায়।
আসাদুজ্জামান জানান, এ ঘটনা যখন ঘটে, তখন তিনি ছুটিতে ছিলেন। এরপরও তিনি ই-মেইলের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিকে পরিকল্পনা শাখার প্রকৌশলী ওয়াসিক উদ্দিন বিষয়টি বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ ও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীউল ইসলামকে জানিয়েছিলেন। এজন্য তিনি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। উড়োজাহাজটি ৩৮দিন পর ঢাকা ফেরত আসার কথা থাকলেও ৬ মাসেও তা আসেনি। এতে বিমানের ৯০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে।