যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করতে একযোগে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামার ব্যাপারে একমত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিগগিরই ঢাকায় এবং জেলা শহরে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুগপৎভাবে মিছিল সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করতে খুব শিগগিরই ঢাকায় এবং এর পর জেলা শহরে যুগপৎভাবে মিছিল করা হবে।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘অনেক বিষয়ে সিপিবির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মত পার্থক্য থাকলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে আমাদের মধ্যে কোনো মত পার্থক্য নেই।’
বৈঠক সুত্র জানায়, বৈঠকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আপনারা সরকারি দলে আছেন আমরা বিরোধী দলে। আমরা বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। পাশাপাশি আপনাদের বর্থতাগুলোও তুলে ধরবো। সরকারের কিছু কিছু কাছে সঙ্গে সিপিবির মত পার্থক্য আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
তবে মতপার্থক্য থাকলেও য্দ্ধুাপরাধীদের বিচার জাতীয় ইস্যু এব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সিপিবি থাকবে বলে পার্টির নেতৃবৃন্দ দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সূত্র জানায়, এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধী দলে আছেন থাকেন আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
তবে মত পাথ্যক্য কি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় সিপিবি নেতৃবৃন্দ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ধীর গতি, দ্রব্যমুল্যের উর্দ্ধগতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রধর্মের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সিপিবি নেতাদের বলেছেন, একবারে সব কিছু করা সম্ভব নয়। আমরা কিছু এগিয়েছি বাকীটা পরবর্তীতে হবে। অনেক কিছু গুছিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হচ্ছে যার কারণে একটু দেরি হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত জোরালো করতে স্বাধীনতার সপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করার উদ্যোগ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে এ বৈঠক হয়।
মঙ্গলবার ১৪ দল এবং বৃহস্পতিবার মহাজোটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তিন বছর অতিক্রমের প্রেক্ষাপটে সিপিবি নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান।
সন্ধ্যা সোয়া ৬ টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণববনে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক প্রায় দুই ঘন্টা বৈঠক চলে।
আ’লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিন বছরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকে কমিউনিস্ট পার্টির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। এরা হচ্ছেন, পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদুল্লাহ চৌধুরী ও হায়দার আকবর খান রনো।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন, দলের সভাপতিম-লির সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধূরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল জলিল, সভাপতিম-লির সদস্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, কাজী জাফরুল্লাহ, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুহ-উল-আলম লেনিন, দপ্তর সম্পাদক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
বৈঠকের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তি আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তিনি বলেন, গত রোববার রাজধানীতে যে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানো হয়েছে তার একটাই উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদৈর বিচার বানচাল করা।
তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বিচার করতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণে ঢাকায় এবং জেলায় জেলায় মিছিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক পুরোনো। আজকের বৈঠকে অনেক বিষয়ে কথা হয়েছে। তা ছিল সতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গিতে। একটা বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে নসাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিরোধী দল জড়িত। এটা দূর্ভাগ্যজনক।
সভা থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে তৎপরতা বড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। যুগপৎ ধারায় আমরা এগিয়ে যাবো।
সাংবাকিদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে তৃতীয় মোর্চা গঠনের চেষ্টা সব সময় চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে একমত। এটার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর সম্পর্ক নেই।