বিসিএস ক্যাডারে নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের অনুপাত এখনো অনেক কম হলেও সে সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বশেষ ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যা বিগত পরীক্ষাগুলোর চেয়ে বেড়েছে।
এছাড়া সর্বশেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনেও সরকারের ২৫টি মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা বৃদ্ধির চিত্র পাওয়া যায়।
গত ২৮ মে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত পিএসসির ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নারী নিয়োগপ্রাপ্তদের হার ২৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ছিল সবচেয়ে বেশি। সে সময় ৩৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ (৩৬০ জন) নারী নিয়োগ পেয়েছিলেন। পুরুষ নিয়োগ পেয়েছিলেন ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ (৭০৩ জন)।
কিন্তু পরবর্তী ২৭তম বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের ফল ছিল হতাশাজনক। নারী নিয়োগ পায় মাত্র ২৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ (৮২২ জন) এবং পুরুষ ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ (দুই হাজার ৪১৭ জন)।
সর্বশেষ ৩টি (২৮ থেকে ৩০ তম) বিসিএস পরীক্ষায় দেখা যায়, আবারো নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বেড়েছে।
সর্বশেষ গত ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নারী ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা ২৯তম বিসিএস এর চাইতে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। এর আগে ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগপ্রাপ্তদের ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ ছিল নারী।
প্রসঙ্গত, বিসিএস ক্যাডারে নারীদের এগিয়ে আসতে সাহায্য করছে বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের ১০ শতাংশ কোটা।
দেখা যায়, ২৭ থেকে ৩০তম, এ চারটি পরীক্ষায় মেধা তালিকা ছাড়াও নারী কোটায় ৮৯৭ জন নারী নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ৩২তম (বিশেষ) বিসিএস এর মাধ্যমে শুধু নারী কোটায় নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে ১৩০ জনকে।
বিসিএস পরীক্ষায় নারী নিয়োগপ্রাপ্তির হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে বিসিএস নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের ‘জেন্ডার বাজেট প্রতিবদেন’এ দেখা যায় ২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০১১-১২ অর্থবছরে নারী কর্মকর্তা ১৭ দশমিক ৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৪।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ে নারী কর্মকর্তা বৃদ্ধির হার খুবই ভালো। এখানে এক অর্থ বছরের ব্যবধানে ৫ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা। তবে সকল ক্ষেত্র মিলিয়ে এ হার ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে।
২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০১১-১২ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবালয় কার্যালয়ে বিসিএস কর্মকর্তা নারীর সংখা ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২০ শতাংশ। তবে সব মিলিয়ে বাড়েনি।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক অর্থ বছরের ব্যবধানে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধির হার ৪৫ থেকে ৪৫ দশমিক ৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী বিসিএস কর্মকর্তা বৃদ্ধির হার এক শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নারী ও পুরুষ কর্মকর্তা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ।
২০১০-১১ অর্থবছরে ২৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে নারী কর্মকর্তা হয়েছে ২৯ শতাংশ।
তথ্যমন্ত্রণালয়ে এক অর্থবছরের ব্যবধানে নারী কর্মকর্তা ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় ২০১১-১২ অর্থবছরে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ দশমিক ৬৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৬৫।
৫ শতাংশ থেকে নারী কর্মকর্তা বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক অর্থবছরের ব্যবধানে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০ শতাংশ।
এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে ধারাবাহিকভাবেই প্রতি অর্থবছরে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিসিএস ক্যাডারে নারী কর্মকর্তা বৃদ্ধির ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “আসলে যে হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল, নারী কর্মকর্তা সে হারে বৃদ্ধি পায়নি। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যেগের কারণে সকল ক্ষেত্রেই নারীরা এখন অনেক এগিয়ে এসেছে।”
তবে বিসিএস পরীক্ষায় নারীর সাফল্যের ধীর গতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই মেয়েরা মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকে। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও অনেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায় না। অথচ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিসিএস পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আ ফ ম নেছার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “নারী-পুরুষ সবাই মেধার ভিত্তিতে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এখানে বৈষম্যর কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি আরো জানান, অনগ্রসর হিসাবে সরকার নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু রেখেছে। ফলে নারীরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।