দিবসের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।
বর্ণাঢ্য এই কুচাওয়াজ ও সালাম প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার অগ্রগতির তথ্য অভ্যাগত অতিথিদের জানানো হয়।
জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে আয়োজিত কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম এ সময় অভিবাদন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্যারেডে অংশ নিতে পারবেন না বলে আগেই বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রতিমন্ত্রী তাজুল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
প্যারেড স্কোয়ারের এ কুচকাওয়াজ কয়েক বছর ধরেই বিজয় দিবস উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে।
দেশের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধানরা এতে আমন্ত্রিত হন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন সেক্টরের প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বরাও এ অনুষ্ঠান উপভোগ করার আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন।
শুক্রবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে প্যারেড স্কোয়ারে কুচকাওয়াজ শুরু হয়। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, কারারক্ষী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিভিন্ন বাহিনী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।
এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কুচকাওয়াজে সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আনসার, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পদব্রজের কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।
এরপর এসব বাহিনী তাদের যান্ত্রিক বহর নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
সংশ্লিষ্ট বাহিনীর অধীনস্ত বিভিন্ন ইউনিট তাদের বহরে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম এ সময় প্রদর্শন করে, যা অভ্যাগত অতিথিদের লাউড স্পিকারে জানানো হয়। যেমন, সেনাবাহিনীর কোন ইউনিটের কাছে কি ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম আছে বা সরকারের কোন মন্ত্রণালয় কোথায় ও কিভাবে সাফল্য অর্জন করেছে ইত্যাদি।
অনুষ্ঠান শেষ হলে বেলা সাড়ে এগারোটায় প্রধানমন্ত্রী প্যারেড স্কোয়ার ত্যাগ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধান করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং ৯ পদাতিক ডিভিশন সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে।
কুচকাওয়াজ ও সালামের উল্লেখযোগ্য দিক:
৯ পদাতিক ডিভিশন ৪০ পাউন্ড ওজনের যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে সালাম জানায়। এ দলের হাতের অস্ত্রগুলো বাংলাদেশেই তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ যান্ত্রিক বহরের নেতৃত্ব দিয়ে যান্ত্রিক বহরের কুচকাওয়াজ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।
ট্যাংক নিয়ে সাঁজোয়া বহরের সালাম প্রদানও এদিনের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা।
সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বহর যুগোস্লাভিয়া ও চীনের তৈরি কামান নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
মেজর মোহাম্মদ তারিকুল হাফিজ বিমান বিধ্বংসী বহরের নেতৃত্ব দিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
পদাতিক বাহিনীর যান্ত্রিক বহরে উভচর আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।
সেনাবাহিনীল ইঞ্জিনিয়ার্স কন্টিনজেন্ট তাদের যুদ্ধকালীন ও দুর্যোগকালীন সেতু তৈরি উপকরণ নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
নোবাহিনীর ১২টি নৌ সরঞ্জাম নিয়ে নৌ যান্ত্রিক বহর কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে বিমান যান্ত্রিক বহর প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর অগ্নি নির্বাচনের যানবাহন ও বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেয়।
যান্ত্রিক বহর নিয়ে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একটি করে গাড়ি কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। গাড়িগুলো পেরিয়ে যাওয়ার সময় এসব মন্ত্রণালয়ের দু’একটি করে সাফল্যের বর্ননা এ সময় দেওয়া হয়।
এ বহরের প্রথমে থাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরপর বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু, শিক্ষা, কৃষি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, পর্যটন করপোরেশন, সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি, পরিবেশ অধিদপ্তর, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, জ্বালানি বিভাগ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্ট:
বিমানবাহিনীর বিমানগুলো ফ্লাই পাস্টে অংশ নেয়। কুর্মিটোলায় এয়ার কমোডর এহসানুল গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে ৭ টি সেকশন এতে অংশ নেয়। বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমান, পরিবহন বিমান ও হেলিকপ্টার অংশ নেয়।
উইং কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও স্কোয়াড্রন লিডার আশফাক উর রহমান খান মিগ ২৯ বিমান নিয়ে ফ্লাই পাস্টে অংশ নেয়। মিগ ২৯ বিমানের মিসাইলটি ৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে।
মিগ ২৯টি প্রধানমন্ত্রীকে ফ্লাইং স্যালুট করে।
মিগ ২৯ বিমানের বিভিন্ন ধরনের কৌশল কুচকাওয়াজে আমন্ত্রিকদের প্রদর্শন করে।
৭০৮ জন বাদক:
সব শেষে সম্মিলিত সুসজ্জিত বাদক দল কুচকাওয়াজের সালাম প্রদান করে। মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ৭০৮ জন বাদক এ দলে অংশ নেন।
‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানের যন্ত্র সংগীত পরিবেশন করে তারা অভিবাদন মঞ্চ অতিক্রম করে। এর মাধ্যমেই কুচকাওয়াজ শেষ হয়।