থলি হাতড়ে যখন কোন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না তখন ক্রিকেটারদের উপলব্ধি হয়েছে সামান্য হলেও চাই তাদের। জয় তো আশা করতেই পারে না, ব্যক্তিগত অর্জনের দিকেই যা একটু মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা। শনিবার থেকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা তাই ভালো ক্রিকেট খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
উইকেট উইকেট করে মাথাকুটে যে লাভ হয় না, তা বুঝে গেছেন অধিনায়ক। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গেও রান করতে না পারায় উপলব্ধিটা হয়েছে,“ব্যাটিংয়ের দিকেই আমাদের ফোকাসটা বেশি থাকবে। কারণ মিরপুরে সচরাচর খুব বেশি স্পিনসহায়ক উইকেট হয় না। আর পেস বোলাররা যে খুব বেশি সাহায্য পায় তাও নয়। ব্যাটিং উইকেট হয় এবং আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারি এবং নিজেদের প্রয়োগ করি তাহলে ভালো কিছু হতে পারে। এটাই আমাদের টার্গেট। এ টেস্টে আমাদের হারানোর কিছু নেই। এখানে আমাদের মূল টার্গেট রেজাল্ট নয়, সেশন বাই সেশন খেলা, ঘন্টা বাই ঘন্টা খেলা। ব্যাটিংয়ে বেশিরভাগ সময় প্রথম ইনিংসে আমাদের ধ্বস নামে। সেই জিনিসটা যদি এড়িয়ে প্রথম ইনিংসে ভালো স্কোর করতে পারি ২৫০ প্লাস, তাহলে হয়ত ভালো একটা খেলা হবে।”
টেস্ট ক্রিকেটে এখানও গুছিয়ে খেলতে শেখেননি বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ১১ বছরে পরেও তাই পাকিস্তানের কাছে ইনিংস এবং ১৮৪ রানে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাকেই এসবের জন্য দায়ী বলে মনে করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক,“আমরা ভারসাম্য একটা দল দাঁড় করাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেই খেলছে হয়তোবা পারছে না। এতো বড় দলের বিপক্ষে ভারসাম্য দল ছাড়া খেললে কাজ অনেক কঠিন হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু ব্যাটিং বলেন বা বোলিং, কোনটাতেই ক্লিক করাতে পারছি না। পুরো সিরিজেই দলের শীর্ষ খেলোয়াড়রা অবদান রাখতে পারছে না। এর চাপটা পুরো দলের ওপরই ছিলো। এজন্যই আমরা অবদান রাখতে পারছি না। এটাই মূল ব্যাপার। শীর্ষ খেলোয়াড়রা না পারলে তরুণদের জন্য আরও কঠিন হয়ে যায়। আমার মনে হয় আমাদের প্রয়োগ ক্ষমতার অভাব।”
পাকিস্তান দলটি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা এনিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাদের পরাজয়কে বড় করে হয়তো দেখা হতো না, যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে পারতো বাংলাদেশ দল। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে সিরিজের পর টেস্ট ম্যাচেও বাজে ভাবে হেরেছে স্বাগতিক একাদশ। হারাতে হারাতে বাংলাদেশ দল একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্ট থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ারও নেই তাদের। মুশফিকুর রহিমেরও বিশ্বাস,“আমাদের হারানোর কিছু নেই। যা কিছু পাওয়া যাবে তা অর্জন বলে গণ্য হবে। এখন আমাদের ওপর কোন চাপ নেই। কারণ আমাদের আর হারানোর কিছু নেই। আমার তাই মনে হয়।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে অষ্টম টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। যার চারটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে একটি মাত্র টেস্টে, মুলতানে ২০০৩ সালে। তারও আট বছর পরে আগের চেয়ে অনেক অপরিণত ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ দল। দেশের মাটিতে এবং বিজয়ের মাসে পাকিস্তানের কাছে এভাবে পরাজয়ে পুরো জাতিই হতাশ। বিজয় দিবস থেকে প্রেরণা নিয়ে শেষটায় ভালো খেলতে চান মুশফিকুররা,“আজ (১৬ ডিসেম্বর) অনেক বিশেষ দিন আমাদের জন্য। সেজন্য আমরা অনেক অনুপ্রাণিতও হচ্ছি। সবাই মোটিভেটেড আছে। এবং সবাই জানে কিরকম মর্যাদা এ পুরো মাস ও দিনটার। সুতরাং তাদের স্মরণে যদি একটা কিছু করতে পারি, তাহলে হয়ত তাদের ডেডিকেট করতে পারি।”
বাংলাদেশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে খেলতে না পারলে আশা ভরসার সবই ধুলো মিশে যাবে। বিশেষ করে টসে জেতা স্বাগতিক দলের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। শীতের হাওয়া, সকালের কুয়াশা এবং শিশির ভেজা মাঠে আগে ব্যাটিং করতে হলে পেস এবং স্পিন উভয়ের ফাঁদে পড়ে ইনিংসের এলোমেলো চিত্র দেখতে হতে পারে দর্শকদের। সেক্ষেত্রে ঢাকা টেস্টের আয়্যুস্কালও চট্টগ্রাম টেস্টের চেয়ে ছোট হয়ে আসতে পারে।