আশাবাদি মানুষগুলো ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও ইতিবাচক দিক খোঁজার চেষ্টা করেন। প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও, তারা ওই কাজটি করেন অবচেতন মনে। চেষ্টা করলেও তাদেরকে সেখান থেকে সরাতে পারবেন না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়করাও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আশাবাদিদের দলে ঢুকে যান। বিশাল পরাজয়ের ভেতরেও দলের ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করার অভ্যাস হয়ে যায় তাদের। ছোট ছোট অর্জনকেও তখন অনেক বড় মনে হয়।
টেস্ট ক্রিকেটে ১১ বছর বিচরণের পরেও পরাজয়ের ধ্বংসস্তুপের আবর্জনা থেকে ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজতে হচ্ছে মুশফিকুর রহিমকে,“নাজিম (নাজিমউদ্দিন চৌধুরী) ভাই অনেক ভালো খেলেছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এসে এমন বোলিংয়ের বিপক্ষে সত্যি দারুণ খেলেছেন। আমাদের টপ অর্ডারে সমস্যা হচ্ছিল বলে নাজিম ভাইয়ের ভালো খেলাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক।”
পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বিশাল পরাজয়ের ভেতরেও মুশফিকুর যে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলেন, একজন মানুষ ঘোরের ভেতরে থাকলেই তা করতে পারেন। হতে পারে সব হারিয়ে সান্ত¡না খোঁজার জন্যই কাজটি তিনি করছেন,“টেস্টের প্রথম সেশনে পাঁচ উইকেট পড়ে যাবার পর সেখান থেকে ফেরা খুব কঠিন। তারপরও প্রথম ইনিংসে নাসির-সাকিব, দ্বিতীয় ইনিংসে নাজিম-সাকিবরা ভালো ব্যাটিং করেছে। এসব থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যাব।”
প্রথম ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পেরেছেন মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান। নাজিমউদ্দিন ৩১, মাহমুদঊল্লাহ ১৮ ও নাসির হেসেন ৪১ রান করেন। বোলিংয়ে তো যাচ্ছেতাই। সাকিব ৪১.৫ ওভার বল করে ১২১ রানে কোন উইকেট পাননি। যে পাঁচটি উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান তার তিনটি-ই নিয়েছেন ইলিয়াস সানি। সাহাদাত ২৭ ওভারে ১১৩ রান দিয়ে একটি, মাহমুদউল্লাহ ৩০ ওভারে ৯৪ রানে একটি, মোহাম্মদ আশরাফুল চার ওভারে ২০ রান দিয়ে উইকেট শূন্য। টেস্ট ক্রিকেটে এই পরিমাণ রান খরচের পর ভালো বোলিং দাবি করা নির্বুদ্ধিতাই প্রকাশ পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের হালচিত্র দেখে খুশি হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। নাজিমউদ্দিনের ৭৮, সাকিবের ৫১ ও মুশফিকুরের ৪৯ বড় কিছু নয়।
ইতিবাচক হতে চেষ্টা করেও নিজেদের অযোগ্যতাকে আড়াল করতে পারেননি মুশফিকুর। শেষপর্যন্ত স্বীকার করেছেন খেলাটার বেসিক-ই ভালো করে শেখা হয়নি তাদের,“অবশ্যই টেকনিক তো একটা ব্যাপার। সিরিজ শুরুর আগেই বলেছিলাম, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট কাঠামো ঠিক না করে টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। হয়তো দেখা যাবে, ১০টি টেস্টের মধ্যে আমরা একটি ভালো খেলছি, বাকি নয়টি খারাপ। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০, দেড়শ ২০০ রান করার অভ্যাস না থাকলে, তাহলে টেস্টে গিয়ে খুব সমস্যা হয়ে যায়। হয়তো একবার-দুবার হয়ে যায়, তবে ধারাবাহিকতা ঠিক রাখাটা খুব কঠিন। আমাদের স্কিল এখনও ওই পর্যায়ের না যে, টেস্টে গিয়ে চাপ সামলাতে পারব। প্রথম শ্রেণীর মনোযোগ দিলে সেটির প্রতিফলন হবে টেস্টে।”