অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কর্মীদের কুপিয়ে-পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় অন্তত ৮ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তবে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৪ জনকে।
এরা হচ্ছেন সহ সম্পাদক রিফাত নেওয়াজ, প্রতিবেদক সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতম এবং অফিস সহকারী রুহুল আমিন ও ইসরাফিল।
আহতদের মধ্যে প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আব্দুর রহিম হারমাছি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহসীনুল করিমও রয়েছেন।
সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। মহাখালীর আমতলী এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়। সেখানে মেঝে রক্তে একাকার হয়ে যায়।
বিডি নিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আকস্মিকভাবেই এ ঘটনা ঘটে। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “আমাদের ৭/৮ জন কর্মীকে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে এসেছি।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে তা কল্পনাতেও ছিলো না। কোনো কিছুই আঁচ করা যাচ্ছে না কেন এই হামলা।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদী আরও বলেন, “আমরা উপরে নিউজরুমে ছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের দুই সহকর্মী সহ-সম্পাদক রিফাত নেওয়াজ এবং প্রতিবেদক সালাহউদ্দিন ওয়াহিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় অফিসের ভিতরে ঢুকতে দেখি। এতে সকলেই হতবাক হয়ে যাই। তারাই জানায় একদল সন্ত্রাসী তাদের ভবনের ভিতরে ঢুকে ছুরিকাহত করেছে।”
“এসময় অন্য সহকর্মীরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। আরও ৫/৬ জন তাদের হাতে আহত হন।”
খালিদী বলেন, “দ্রুত পুলিশ ডাকা হলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। তবে হামলাকারীদের আটক করা যায়নি।“
এ ঘটনায় দ্রুত মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
আমাদর সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাইদ আরমান দ্রুত ছুটে যান বিডিনিউজ কার্যালয়ে। তিনি সেখান থেকে জানান, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা সেখানে রয়েছেন। বিভিন্ন মিডিয়ার সহকর্মীরাও উপস্থিত হয়েছেন। তবে বিডিনিউজের পক্ষ থেকে এ হামলার কারণ কি হতে পারে বা কারা হামলা চালিয়েছে সে সম্পর্কে কিছুই জানানো সম্ভব হয়নি।
বিডিনিউজ কার্যালয়ে যান স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ মোমিন। তিনি সেখানে কথা বলেন ডিএমপি’র গুলশান জোনের ডিসি খন্দকার লুৎফুল কবীরের সঙ্গে।
লুৎফুল কবীর বাংলানিউজকে বলেন, “ঘটনা জানার পর দ্রুত আমরা এখানে এসেছি। ঘটনার কারণ এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে আশা করি দ্রুতই এ বিষয়ে জানাতে পারবো।”
এ লক্ষ্যে পুলিশের সদস্যরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে বিডিনিউজের অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে:
আমতলীর বন ভবনের পাশেই ৯৯ মহাখালীর পঞ্চম তলায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়। এর নিচ তলায়ই সন্ত্রাসীরা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহ সম্পাদক রিফাত নেওয়াজ এবং প্রতিবেদক সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমের পায়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেছে সন্ত্রাসীরা।
গুরুতর অবস্থায় তাদের দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অনলাইন এই সংবাদ সংস্থার নতুন কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অফিস সহকারী রুহুল আমিন নিচে অবস্থানকালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এলাকার এক সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়।
কার্যালয়ের দায়িত্বরত সাংবাদিকরা খবর পেয়ে নিচে গিয়ে ওই সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে খবর দিলে মহল্লার সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়ে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।
সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ের নিচ তলার শাটার খুলে ভেতরে ঢুকে পড়েই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় রিফাত ও প্রীতমের পায়ে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়।
হামলার শিকার হন প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আব্দুর রহিম হারমাছি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহসীনুল করিমসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এছাড়া অফিস সহকারী কয়েকজনকেও পিটিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
রাতে হাসপাতালে ৩ মন্ত্রী
অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের আহত কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে রাতে তিনজন মন্ত্রী উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে ছিলেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান:
রাত ১১ টা ৫০ মিনিটের দিকে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ আসেন। তিনি প্রায় ৩০ মিনিট হাসপাতালে অবস্থান করেন ও আহতদের খোঁজখবর নেন। এরপর রাত ১২ টা ৩৯ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম হাসপাতালে আসেন।
আহতদের দেখার পর সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন – ‘শোনা যাচ্ছে এই হামলার সঙ্গে যুবলীগ জড়িত’। উত্তরে প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নাই।’
তখন সাহারা খাতুন তাকে থামিয়ে দিযে বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলছি সন্ত্রাসী যেই হোক সে ছাড় পাবেনা। সে যদি যুবলীগও হয় তবুও ছাড় পাবে না।’ (মহাখালীর বিডিনিউজের অফিসের পাশেই যুবলীগের অফিস)
এ ঘটনা আইন শৃঙ্খলার অবনতি কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার অবস্থা আপনারা বিচার করবেন। আপনারা সে বিষয়ে ভালো জানেন। তবে সাংবাদিকদের উপর হামলা নিন্দনীয় ঘটনা। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ঘটনা জানার পর পরই প্রশাসন কাজে নেমেছে। তবে ঘটনা আসলে কি তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা বেড়েছে, তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার ভূমিকা কি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি ব্যাপারটা জানি। আমরাও আসলে বিব্রত। আমি বিভিন্ন সময়ে আহত সাংবাদিকদের দেখতে গিয়েছি। গতকালও ফটো সাংবাদিকদের দেখতে ট্রমা সেন্টারে গিয়েছি। আমি সাংবাদিকদের পাশে আছি।”
আহতরা আশঙ্কামুক্ত
এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মরত ডাক্তার মোহাম্মাদ বায়েজিদ জানিয়েছেন, বর্তমানে বিডিনিউজের কর্মীরা আশঙ্কামুক্ত।
ডাক্তার বায়েজিদ বলেন, “রিফাত ও প্রীতমের দুই উরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত”।
রুহুল আমীন ও ইসরাফিলও আশংকামুক্ত বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে কথা হয় বিডিনিউজের অপারেশন ম্যানেজার রাশেদ আহসানের সঙ্গে। তিনি জানান, ছুরিকাহত চার জনের মধ্যে দু’জনের জখম গুরুতর। তাদের অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।
খালেদা জিয়ার নিন্দা
এদিকে, বিডিনিউজ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বিএনপি কার্যালয় সূত্রের বরাত দিয়ে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ জানান, এ হামলাকে সার্বিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর হামলা বলে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এ ঘটনায় প্রতীয়মান হয় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা অবনতি হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।