‘খালেদা জিয়া আমাকে বাড়িতে থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তার বিচার করেছেন। আজ তাকেই বাড়িছাড়া হতে হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
শুক্রবার দুপুরে হোটেল ওয়েস্টিনে দৈনিক ঘোষণা পত্রিকার ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও নবরূপে আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, ‘আমি এমপি থাকলেও আমাকে সংসদে যেতে দেওয়া হয়নি। আজ কোন মুখে তারা সংসদে যাওয়ার কথা বলেন। আমাকে তো সংসদে যেতে দেওয়া হয়নি। তাহলে তারা সংসদে যাবেন কেন?’
এরশাদ বলেন, ‘এখন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের কথা শুনি। মামলায় কেন জামিন হয় না তার কারণেও ভাঙচুর করা হয়। বিচার বর্হিভুত হত্যার কথা শুনি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা শুনি। আজ যারা এসব কথা বলেন, তারাই আমার সঙ্গে অবিচার করেছেন। তাদের মনে রাখা উচিত, আল্লাহ সবার বিচার করেন।’
এরশাদ বলেন, ‘আমার জামিনযোগ্য মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি। আমরা তো ভাঙচুর করিনি। আমার জামিন ঠেকানোর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন। পৃথিবীতে কোথাও এমন নজির নেই। জেলে থেকেই আমি পাঁচটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলাম। আমার মন্ত্রীরা কেউ জেল থেকে পরাজিত হননি। এতেই প্রমাণ হয়, আমার সরকার ছিল জনপ্রিয় সরকার।’
জেল জীবনের বর্ণনা করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার ইফতারের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৫ টাকা। আমাকে চিকিৎসা দেওয়া ও পিজিতে নেওয়ার জন্য অনশন করলেও চিকিৎসা করানো হয়নি। এখন শুনি, সর্দি জ্বর হলেও পিজিতে চলে যান। আমার স্ত্রীকে সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে রাখা হয়েছিলো।’
‘খবরের কাগজ নেই, পড়ার বই নেই। পৃথিবী থেকে বিছিন্ন ছিলাম। আমাকে তারা মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। তাদের মুখে যখন গণতন্ত্রের কথা শুনি, তখন অবাক লাগে।’
এরশাদ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কলমের শক্তি অনেক। এই কলম ভালো-মন্দ বিভিন্ন কাজেই ব্যবহার করা হয়। তবে আমি আশা করবো, দৈনিক ঘোষণার সাংবাদিকরা সমাজ গঠনে কাজ করবেন।’
মওদুদ সম্পর্কে এরশাদ বলেন, তিনি এমএ পাস করে মেট্রিকে ভর্তি হয়েছেন। দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর সাজা হয়েছিলো তার, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যে বিশ্বাস করে বলেই প্রথম অধিবেশনে তথ্য অধিকার আইন পাস করা হয়েছে। ১৫টি টিভি ১১টি কমিউনিটি রেডিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
‘আমরা গঠনমূলক সমালোচনা আশা করি। কোনো দলের পত্রিকা হওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো দলের মুখপত্র হলে সেই দলের লোকই সেটি কিনবেন। আর জনগণের কথা বললে এগিয়ে যাবে।’
অষ্টম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করছেন। আমরা তাদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করি।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশে এখন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রসার ঘটেছে। নিজস্ব চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে জনমনে স্থান করে নিতে হবে।
‘ঘোষণা পত্রিকায় ভবিষ্যতে কি থাকবে, তার একটা স্পষ্ট ঘোষণা শুনতে চাই’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঘোষণা জাতির কলঙ্ক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন হানিফ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, দৈনিক ঘোষণার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রধান সম্পাদক এইচএনএম শফিকুর রহমান, সম্পাদক সাইদুর রহমান টেপা, নির্বাহী সম্পাদক সুনীল শুভরায়।
উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।