‘মোশাররফই আমার মায়ের হত্যাকারী: বিলওয়াল ভুট্টো

‘মোশাররফই আমার মায়ের হত্যাকারী: বিলওয়াল ভুট্টো

পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফকেই নিজের মায়ের হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ অভিযোগ
করেন।

এ সময় তিনি অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের অঙ্গীকারও করেন।

বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর পর তার পুত্র বিলওয়াল ভুট্টোকেই পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টির প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়।

মোশাররফকে অভিযুক্ত করে বিলওয়াল বলেন, ‘২০০৭ সালে আমার মা পাকিস্তান ফেরার পর তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে শিথিল করেছিলেন মোশাররফ।’ মায়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার শিথিলতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও পাকিস্তানে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বলে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেন বিলওয়াল।

সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশে পাকিস্তানের বর্তমান সরকার আমাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করবে।’

২৩ বছর বয়সী সাবেক এই অক্সফোর্ড পড়ুয়া গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে পাকিস্তান ফিরে আসেন। মায়ের মৃত্যুর জন্য তিনি পাকিস্তানের ধর্মীয় চরমপন্থী গ্রুপ ও মোশাররফ সরকারকে যৌথভাবেই দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ‘আল কায়েদা এই হামলার নির্দেশনা দিয়েছিলো এবং হামলার কাজটি সম্পন্ন করেছিলো তালেবান। তবে চূড়ান্তভাবে পারভেজ মোশাররফই আমার মায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শিথিল করে দিয়েছিলো। যদিও তিনি জানতেন পাকিস্তানে আমার মায়ের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।’

তিনি বলেন, ‘তিনি আমার মাকে হত্যা করেছেন। আমি তাকেই আমার মায়ের হত্যাকারী হিসেবে দায়ী করি। তিনি আমার মাকে এর আগেও হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার নিরাপত্তা আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ও সহযোগিতার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।’

বিলওয়াল এ সময় আরও বলেন, ‘তিনি যখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেন, তখনই সব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো। তিনি পাকিস্তানের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে কখনোই আগ্রহী ছিলেন না। যখন আমার মা তার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলেন, তখনই তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার নিরাপত্তা কমিয়ে দিলেন।’

উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর এক হামলায় নিহত হন। দেশে ফেরার অল্প সময় পরই রাওয়ালপিন্ডিতে একটি নির্বাচনী র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার সময় তার গাড়ি বহরে হামলা করা হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর অবস্থিত। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানের শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ বর্তমানে লন্ডন ও দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন।

দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য পুনরায় পাকিস্তানে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সরকারের হুমকির মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য তার দেশে ফেরা পিছিয়ে যায়। তাকে দেশে ফিরলেই গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলো পাকিস্তানের বর্তমান সরকার।

বেনজির ভুট্টো ও পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জারিদারির ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো এখন পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এখন পাকিস্তানের রাজনীতিতে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের আশা করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি এর আগের নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পারিনি। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। তবে আমি সামনের নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে আশাবাদী। পাকিস্তানের রাজনীতিতে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।’

আন্তর্জাতিক