লন্ডন: স্থানীয় বাংলাদেশ হাইকমিশনের নেতৃত্বে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় হামলা সম্পর্কিত অভিযোগের কোন বিস্তারিত তথ্য লর্ড এভিবুরিকে এখনও দেননি বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ।
বিএনপি নেতা ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক গত ২৬ নভেম্বর ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইস চেয়ার লর্ড এভিবুরির সাথে সাক্ষাত করে এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উত্থাপন করলে এভিবুরি ঘটনার পুলিশ রিপোর্টসহ বিস্তারিত তথ্য তাকে দিতে বলেছিলেন।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এভিবুরিকে জানিয়েছিলেন চলতি বছরের সামারের কোন এক গভীর রাতে তারেকের বাসায় হামলার সময় লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি গাড়ীও উপস্থিত ছিল। ঘটনা সম্পর্কে সাথে সাথে পুলিশে অভিযোগ করলেও এখন পযর্ন্ত পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
অভিযোগ শুনে লর্ড এভিবুরি জয়নুল আবেদিন ফারুককে বলেছিলেন, ঘটনার পুলিশ রিপোর্টসহ বিস্তারিত জানালে তিনি লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইবেন। কিন্তু অভিযোগ উত্থাপনের প্রায় দুই সপ্তাহ গত হলেও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ বা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও কোন তথ্য সরবরাহ করা হয়নি লর্ড এভিবুরি অফিসে।
এ বিষয়ে লর্ড এভিবুরির কাছে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় হামলার অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিলে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে জানতে চাইবো, এমন প্রতিশ্রুতি বিএনপিকে দিলেও এখন পর্য়ন্ত বিএনপি‘র পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।
তিনি জানিনা, আমি জানিনা, এধরনের কোন ঘটনা সম্পর্কে আদৌ পুলিশে কোন রিপোর্ট হয়েছে কি না। বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এই অভিযোগ ছাড়াও সরকারের মানবাধিকার লংঘনের আরও বেশ অভিযোগ তাঁর কাছে উত্থাপন করেছিলেন উল্লেখ করে এভিবুরি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের কিছু পত্র পত্রিকার কাটিংই শুধু এক্ষেত্রে প্রমান হিসেবে উত্থাপন করেন জয়নুল ফারুক।
এই অভিযোগ গুলোও কমিটি অন দ্য হিউম্যান রাইটস পার্লামেন্টারিয়ানস অব দ্য ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন এর কাছে দাখিল করতে বলেছিলাম আমি, এমনটিই বাংলানিউজকে বললেন এভিবুরি।
এদিকে, বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদিন ফারুকের রহস্যজনক দীর্ঘ ব্রিটেন সফর নিয়েও লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলছে গুজব গুঞ্জন। সফরের পুরো সময় ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সাথে সাক্ষাত ও সর্বশেষ লর্ড এভিবুরির কাছে তারেকের বাসায় হামলা সম্পর্কিত অভিযোগকে বিভিন্ন ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করছেন অনেকে। গুঞ্জন চলছে সম্প্রতি অর্থ পাচার মামলায় তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই প্রতিনিধির স্বাক্ষী ও গ্রেনেড হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ মোকাবেলায় তারেককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই তারেকের জন্যে নতুন একটি গ্রাউন্ড সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি। কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ থেকে এক অভিযুক্ত ব্রিটিশ-বাংলাদেশিকে ব্রিটেন ফিরিয়ে এনেছে, এই যুক্তি তুলে ধরে বাংলাদেশও তারেককে ব্রিটেন থেকে ফিরিয়ে নিতে চাইবে এমন একটি আশঙ্কা থেকেই বিএনপি‘র পক্ষ থেকে জয়নুল আবদিন ফারুককে নতুন গ্রাউন্ড সৃষ্টির চেষ্টা করতে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে, এমনটিই মনে করছেন কেউ কেউ।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তো বটেই, ব্রিটেনেও তারেকের নিরাপত্বা হুমকির মুখে, এমনটাই প্রমাণ করতে চায় বিএনপি। আর এটি প্রমাণ করতে পারলে এই সরকারের আমলে অন্তত তারেককে দেশে ফিরে যেতে হবে না, বিচারেরও সম্মুখিন হতে হবে না। লর্ড এভিবুরির কাছে তারেকের বাসায় হামলার অভিযোগ বিএনপি‘র এই পরিকল্পনারই একটি অংশ বলে মনে করছেন অনেকে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শুধু জয়নাল আবেদিন ফারুকই নন, খোদ তারেক রহমানও কয়েকজন ব্রিটিশ রাজনীতিকের সাথে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন বলেও একটি সূত্র থেকে বাংলানিউজকে জানানো হয়েছে। শুধু লন্ডন নয়, ইউরোপের ২/১টি দেশও এরই মধ্যে সফর করেছেন জয়নুল আবেদিন ফারুক। এই সফরও তার নতুন গ্রাউন্ড সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি লন্ডন রয়েছেন। ১৫ ডিসেম্বর পযর্ন্ত তিনি লন্ডন তাকবেন বলে হজানা গেছে।
এদিকে, এভিবুরির কাছে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় হামলার অভিযোগ উত্তাপন করায় খোদ যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র নেতাকর্মীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য বিএনপি’র কয়েকজন কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, কি উদ্দেশ্যে এবং কেন যে লর্ড এভিবুরির কাছে এই অভিযোগ উত্তাপন করা হলো তা আমরা বুঝতে পারছি না। এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল, অথচ যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র নেতাকর্মীরা কেউ জানলো না, তা কেমন করে হয়।
এ ধরনের একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্তাপন করে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের কাছে বিএনপি‘র বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের সম্মুখিন করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র কোন শীর্ষনেতা অবশ্য এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারেকের জন্যে নতুন গ্রাউন্ড সৃষ্টির পরিকল্পনা সম্পর্কে দু-এক জন শীর্ষ নেতা ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র আর কেউই অবহিত নন বলে জানা গেছে।