বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে জাতি বুধবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন করেছে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপোসহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে অবস্থিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রতিবছর এই ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এ বছর উজ্জীবিত জাতি ভিন্নমাত্রায় দিবসটি উদযাপন করছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতিতে বাংলাদেশের মানুষের গৌরব ও সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি গত আড়াই হাজার বছরে মধ্যে সবচেয়ে জোরালো এবং যুদ্ধকালীন অনুপ্রেরণাদায়ী ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে একটি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক জ্যাকব এফ ফিল্ড বইটির প্রণেতা। এতে উইনস্টন চার্চিল, আব্রাহাম লিঙ্কন এবং মাও সেতুংসহ অনেক বিশ্ব নেতার ঐতিহাসিক ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে জাতির পিতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাক্সিক্ষত মুক্তির লক্ষ্যে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে জাতির পিতার অসীম সাহসিকতা, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং সঠিক নির্দেশাবলীর নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ায় তাঁর অবদানকে খুবই সম্মানে সঙ্গে স্মরণ করেন।
দেশের উন্নয়নে এবং বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে আবারো একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে তাঁরা জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তাঁর ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকান্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ-এর ভাষণে শুধু এই জাতির প্রতি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার আহ্বানই ছিল না, বরং এটি ছিল বিশ্বের সব দেশের মানুষের জন্য একটি দিকনির্দেশনা।
দিবসটিকে উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং আলোচনা ও সমাবেশের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। দুপুর ২টায় ৭ মার্চের ভাষণের স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনসভা। দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে এবং জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে।