চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা একটা প্রকল্প। আর প্রকল্পে যারা কাজ করে তারা কিন্তু প্রকল্প হিসেবেই সেখানে কাজ করে। কাজেই প্রকল্পে কর্মরত যারা, তাদেরকে কিন্তু সরকারি চাকরি দেয়া কোনো সুযোগ নেই। যাদের এটা পছন্দ হবে না। তারা চলে যাবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই আন্দোলন করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রথম এ ব্যাপারে মুখ খুললেন।
আন্দোলনরতদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ট্রেনিং পেয়েছে, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল হচ্ছে সেখানে চাকরির সুযোগ পাবে। আমরা নতুন লোককে কাজ দেব। কিন্তু এ প্রকল্প চলমান আছে, চলমান থাকবে। এটা কমিউনিটির স্থানীয় লোকজনই রক্ষণাবেক্ষণ করে। তাদেরই অধিকার এটা রক্ষা করা। আমরা তাদেরকে সবধরনের সহযোগিতা দেই।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের অধিকার। এই সেবা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তিনি আরও ব্যাপকভাবে তা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। আমরা সরকার গঠন করার পর কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো উন্নত করা ও নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলি। দুর্ভাগ্য হলো বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। দেশে এখন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এসব কেন্দ্র থেকে আমরা জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি। এখান থেকে ৩০ প্রকার ওষধ বিনামূল্যে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আমাদের নার্সের অভাব ছিল। আমরা ইতোমধ্যে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। ১২ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। ১৪৫ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দিয়েছি। তাছাড়া প্রায় ১২’শ ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি।
দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই রাজনীতি করি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। বিশ্বব্যাংক যা বলেছে তা গালগল্প। আমরা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এসেছি দুর্নীতি করতে না। নিজের ভাগ্য গড়তে না। জনগণের ভাগ্য গড়তে আমরা রাজনীতি করি। বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। আগামী মার্চেই বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। নিম্ন বা মধ্যম নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই।
বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন সংসদে যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হতো, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অত্যন্ত গঠনমূলক সমালোচনা করছে। গণতান্ত্রিক চর্চাটা কীভাবে হতে পারে তা এই সংসদে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি। যতদিন তারা নিজ মাটিতে ফিরে না যায় ততদিন যাতে একটু ভালোভাবে থাকে সেই ব্যবস্থা করেছি। ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গার আইডি কার্ড করে দিয়েছি, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ মিয়ানমার করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে, বিনিয়োগের কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগ যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য ওয়ানস্টপ সেন্টার চালু করছি। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য একশ’টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।