দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ঘুচছে বেকারত্ব

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ঘুচছে বেকারত্ব

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রাজশাহী অঞ্চলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে রাজশাহী সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন হাজারও বেকার। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

১২ একর এলাকাজুড়ে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে রাজশাহী টিটিসি। ওই বছরের ১ জুলাই থেকেই শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। টিটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছয় পদের বিপরীতে এখানে চিফ ইন্সট্রাক্টর রয়েছেন তিনজন। ২১ পদের বিপরীতে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর রয়েছেন ১৪ জন। ৩৯ পদের বিপরীতে ইন্সট্রাক্টর রয়েছেন ৩৩ জন। স্টোনোগ্রাফার, কেয়ার টেকার, ইউডিএ, স্টোনো টাইপিস্ট পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। সবমিলিয়ে পদশূন্য রয়েছে ২৭টি।

TTC-Photo

গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃত্তির চাহিদা ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত চাহিদা রয়েছে আরও ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে প্রথম থেকে চতুর্থ কিস্তির বৃত্তি বাবদ বরাদ্দ এসেছে ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিতরণ হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ টাকা।

রাজশাহী টিটিসিতে ভোকেশনাল ১২টি ট্রেডে আসন সংখ্যা ৩৭০। ২০১৬ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় ৪১০ প্রশিক্ষণার্থীকে। প্রায় শতভাগ উপস্থিত প্রশিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৭ জন। তাদের প্রত্যেককে বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০১৭ সালে ৪টি ট্রেডে ১৪৫ আসনের ভর্তি করা হয়ছে ১৪৫ জনকে। এর মধ্যে ১০৫ জনকে বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

অন্যদিকে ১২টি ট্রেডে ৩৭০ আসনে দশম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে ৩২৯ জন। এর মধ্যে ২৩০ জনকে বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, ২ বছর মেয়াদী এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে ২০১৫ সালে ভর্তি হয়েছিল ২৮৮ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে অনিয়মিতসহ উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৫২ জন। পরের বছর ভর্তি হয়েছে ২২৯ জন। এর মধ্যে উতীর্ণ হয়েছে ১৭২ জন। ২০১৭ সালে ভর্তি হয়েছে ৩১৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৫৫ জন। ২০১৩ সালে ১২টি ট্রেডে গড়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী। পরের বছর তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ শতাংশে। ২০১৫ সালে ৯১ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে এসব ট্রেডে।

TTC-Photo

এদিকে, এসটিইপি প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে ৩৬০ ঘণ্টার স্বল্প মেয়াদি কোর্স। এতে ৬টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার ট্রেডে ৭৮০ জন অংশ নিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে যুক্ত হয়েছে আরও দুটি ট্রেড। ওই বছর ছয় ট্রেডে ৩৭০ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ২০১৭ সালে প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন ৪৮০ জন। এ কয়েক বছর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে গড়ে ৬৫ শতাংশ জনবল। আর এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় ৫ ট্রেডে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছে এক হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে

রয়েছে নিজ খরচে ১৩টি কোর্সে প্রশিক্ষণের সুযোগ। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৯টি ট্রেডে ভর্তি হন ৪৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী। গড়ে ৯৪ দশমিক ২৩ শতাংশ উত্তীর্ণ হয় সেবার। পরের বছরে ৫টি ট্রেডে ৪০২ জন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি হন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ৯৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে ১১টি ট্রেডে ৪৯৭ জন ভর্তি হয়ে উত্তীর্ণ হন ৯৭ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে ৬টি ট্রেডে ভর্তি হয়েছে ৩১০ জন। এ ক’বছর উত্তীর্ণ ৮০ শতাংশ প্রশিক্ষনার্থীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রশীদ তালুকদার জানান, তারা আধুনিক ও সময়োপযোগী বিভিন্ন কোর্সে বেকার ও বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ পাচ্ছে লোকজন।

তুলনতামূলক কম খরছে স্ব-অর্থায়নে মানসম্মত প্রশিক্ষণের সুযোগও রয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে দেয়া হচ্ছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সনদ। বেকারত্ব ঘোচাতে আগ্রহীদের টিটিসিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা সংবাদ